ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিট পাম্প ডেনমার্কে

অনলাইন ডেস্ক

এখনও হিটিং সিস্টেম বা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্বনমুক্ত করার চেষ্টা করছে জার্মানি। কিন্তু ডেনমার্ক এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

দেশটির এসবিয়ার্ক শহরে শিগগিরই ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিট পাম্প চালু হতে যাচ্ছে, যেখানে সমুদ্রের পানি ব্যবহৃত হবে। এই হিট পাম্প প্রায় এক লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করবে।

জার্মানির এমএএন এনার্জি সলিউশনস কোম্পানি হিট পাম্পটি তৈরির কাজ করছে। হিট পাম্প চালাতে যে বিদ্যুৎ লাগবে, তা বায়ুশক্তি থেকে আসবে।
সমুদ্রের পানি থেকে প্রায় দুই-তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা স্থানান্তর করে হিট এক্সচেঞ্জার। শেষ পর্যন্ত শহরের হিটিং নেটওয়ার্কের ভেতরের পানি সর্বোচ্চ ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়।

হিট পাম্পে সঞ্চালিত হওয়া তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানি দ্বারা উষ্ণ করা হয় এবং বাষ্প হয়ে যায়। এরপর কার্বন ডাই-অক্সাইডকে সংকুচিত করে তাপমাত্রা আরও বাড়ানো হয়। কম্প্রেসার পরিচালনার জ্বালানি আসে ডেনিশ উপকূলে থাকা উইন্ড টারবাইন থেকে।

ডিআইএন ফরসিনিং কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কেনেথ ইয়র্গেনসেন বলেন, “শহরের, বিশেষ করে বন্দরের অনেক কর্মকাণ্ড উইন্ড টারবাইনকে ঘিরে হয়। সে কারণে আপনি বলতে পারেন, যখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ থাকে তখন আমরা প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। এটি আমাদের গ্রিডে আরো বেশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি যুক্ত করতে সহায়তা করে। একই কারণে আমরা গ্রাহকদের সস্তায় তাপ দিতে পারি। যেটা পেয়ে গ্রাহকরা অবশ্যই খুশি থাকেন। অর্থাৎ বিদ্যুৎ খুব সস্তা থাকে, যখন খুব বাতাস থাকে তখন আমরা তাপ উৎপাদন করি। ফলে দাম তখন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে যায়।”

এই প্রকল্পের পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন এসবিয়ার্কের মেয়র ইয়াস্পার ফ্রস্ট রাসমুসেন৷ তিনি বলেন, “ডেনমার্কে জেলাভিত্তিক হিটিং সিস্টেম চালু আছে। ফলে ইতোমধ্যে শহরের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তাপ উৎপাদন করে শহরের সব বাড়িতে বিতরণ করতে পারি। আমার মনে হয়, ডেনমার্ক যে গ্রিন ট্রানজিশনে সামনের দিকে আছে, এই প্রকল্প তার বড় একটা উদাহরণ।”

বর্তমানে এসবিয়ার্কের এক লাখ বাসিন্দা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল।

তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও ছিল। এসবিয়ার্কের মেয়র ইয়াস্পার ফ্রস্ট রাসমুসেন বলেন, “আপনি যখন বড় স্থাপনা, বড় নির্মাণকাজ শুরুর পরিকল্পনা করেন তখন অনেকগুলো কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি যাচাই করে দেখতে হয়। তবে আমাদের এখানে ডেনমার্কে প্রায় ৪০ বছরের পুরনো একটা আইন আছে, যাতে বলা হয়েছে, ডিস্ট্রিক্ট হিটিং সিস্টেমে অর্থ অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহার করতে হবে, এবং আপনি এটা থেকে লাভ করতে পারবেন না।”

ডিআইএন ফরসিনিং কোম্পানির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কেনেথ ইয়র্গেনসেন বলেন, “এই প্রকল্পে পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ আমরা এখানে এসবিয়ার্কে আছি, যেটা ‘নেচার ২০০০’ এলাকাগুলোর একটি৷ এছাড়া আছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ একটি এলাকা। আমরা যখন সমুদ্রের পানিভিত্তিক হিট পাম্প স্থাপনের কথা বলা শুরু করি, তখন দেখেছি, কর্তৃপক্ষ আসলে মেশিন নিয়ে এতটা আগ্রহী ছিল না, তারা বেশি আগ্রহী ছিল সমুদ্রের পানির কী হবে, তা নিয়ে৷ পাম্পে ফুটো হয়ে সমুদ্রের পানি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, তা জানতে বেশি আগ্রহী ছিল তারা। তাই এটি বের বের করতে আমরা অনেক সময় ব্যয় করেছি।”

ইতোমধ্যে সেই সব উদ্বেগের সুরাহা করা হয়েছে। এখন সব পক্ষ আশা করছে, এই শরতে হিট পাম্পটি চালু হবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights