ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী ভাসুবিহার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে ভাসুবিহার। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এটি বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। উপজেলার এই স্থানটি স্থানীয়দের কাছে নরপতির ধাপ নামে বেশ পরিচিত। এই প্রত্নস্থল মূলত অষ্টম শতকের বৌদ্ধ বিহার। তবে ব্রিটিশ আমলে ভাসুবিহারকে স্থানীয়রা ‘ভুশ্বুবিহার’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। যা বর্তমানে ভাসুবিহার নামে পরিচিতি লাভ করেছে। যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ৭০০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু ধর্মশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতেন।

জানা যায়, ভাসুবিহার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার এবং বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ও মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বিহার বন্দরের কাছে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে এখানে এসেছিলেন। তার ভ্রমণ বিবরণীতে তিনি এটাকে ‘পো-শি-পো’ বা ‘বিশ্ববিহার’ নামে উল্লেখ করেছেন। এটি বৌদ্ধদের ধর্মীয়

বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৭৩-৭৪ সালে ভাসুবিহারটির প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয় এবং পরবর্তী দুই মৌসুম তা অব্যাহত থাকে। খনন কাজের ফলে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরের স্থাপত্যিক কাঠামোসহ প্রচুর পরিমাণ প্রত্নবস্তু উন্মোচিত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তরদক্ষিণে ৪৯ মিটার ও পূর্বপশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ ও কক্ষগুলোর সামনে চতুর পাশে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ব বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশপথ রয়েছে। বৃহদাকার বিহারটির ভূমি পরিকল্পনা ও স্থাপত্য কৌশল প্রথমটির অনুরূপ। এর পরিমাপ পূর্বপশ্চিমে ৫৬ মিটার ও উত্তরদক্ষিণে ৪৯ মিটার। এর চার বাহুতে ৩০টি ভিক্ষুকক্ষ এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশপথ অবস্থিত। বিহারের অদূরে উত্তরমুখী মন্দিরটির আয়তন উত্তরদক্ষিণে ৩৮ মিটার এবং পূর্বপশ্চিমে ২৭ মিটার। মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি বর্গাকার মন্ডপ। এর চতুর্দিকে রয়েছে ধাপে ধাপে উন্নিত প্রদক্ষিণপথ।

উৎখননে প্রাপ্ত প্রায় ৮০০ প্রত্নবস্তুর মধ্যে ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক এবং পোড়ামাটির সিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সংগৃহীত হয়েছে মূল্যবান পাথরের গুটিকা, লোহার পেরেক, মাটির গুটিকা, নকশাকৃত ইট, মাটির প্রদীপ ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এবং প্রচুর মৃৎপাত্রের টুকরা। মূর্তিগুলোর মধ্যে বুদ্ধ, ধ্যানীবুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব এবং বোধিশক্তি উল্লেখযোগ্য। বগুড়া মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্য ভাসুবিহার একটি। এটি নিরাপদ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের শৃঙ্খলার জন্য সরকারিভাবে প্রবেশ টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কত টাকা প্রবেশমূল্য হবে তা বলা যাচ্ছে না। শিগগরই টিকিট বিক্রি শুরু হলে প্রবেশমূল্য জানা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights