ইয়াবা প্রবেশের হটস্পট

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশে ইয়াবা প্রবেশের নতুন হটস্পটে পরিণত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় উপজেলা চট্টগ্রামের আনোয়ারা। ইয়াবার রাজধানীখ্যাত সান স্টেট থেকে কমপক্ষে তিনটি নদী এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায়। পরে এসব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। চট্টগ্রাম পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো রাসেল বলেন, ‘আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকা নিয়ে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান শুরু হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই আনোয়ারাকে আমরা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক বাধার কারণে আনোয়ারার মাদক প্রবেশের দ্বারগুলোতে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। ওই এলাকায় যখনই অভিযানের জন্য যাওয়া হতো, সঙ্গে সঙ্গে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত সহকারী ফোন দিয়ে হুমকিধমকি দিত। ফলে অভিযান না করে ফিরে আসতে হতো। এভাবেই ইয়াবা প্রবেশের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় আনোয়ারার উপকূল। অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের রাজধানীখ্যাত মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে ইয়াবা মাফিয়ারা কিছু কিছু চালান পাচারে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের তুয়াঙ্গী ও ইয়াঙ্গুন নদী। ভৌগোলিক কারণে নজরদারির বাইরে থাকা নদীটি ব্যবহার করে ইয়াবার চালান নিয়ে আসা হয়। এ দুই নৌপথ ব্যবহার করে ইয়াবার চালান আনা হয় মিয়ানমারের ইরাবতী অঞ্চলের রাজধানী প্যাথেইনে। পরে প্যাথেইন নদী হয়ে ইয়াবার চালান চলে যায় বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সেন্টমার্টিনের আশপাশ এলাকায়।

ওখানেই বাংলাদেশ থেকে মাছ ধরতে যাওয়া কতিপয় ‘জেলেদের’ হাতে তুলে দেওয়া হয় ইয়াবার চালান। এরপর মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবার চালান চলে আসে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় উপজেলা চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। এ উপজেলার উপকূলীয় কমপক্ষে ১০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান প্রবেশ করে চট্টগ্রামে। এ পয়েন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গহিরা ইউনিয়নের রায়পুর, প্যারাবন এলাকা, পারকি সৈকত, বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাচর এবং জুইদ ী ইউনিয়নের কমপক্ষে তিনটি পয়েন্ট। আনোয়ারা উপজেলাকে ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত করার নেপথ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ১০ ইয়াবা ব্যবসায়ী। যাদের কেউ কেউ আবার কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা।

তাদের এ কাজে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আনোয়ারা উপজেলার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতা। ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছেন রিকশাচালক, সিএনজি ট্যাক্সি চালক এবং দিন মজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এসব ক্যারিয়ারদের মাধ্যমে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবার চালান।

অভিযোগ রয়েছে- আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকাকে ইয়াবার নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত করার নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, দুজন ইউপি চেয়ারম্যান এবং ১৫ জনের মতো ইউপি সদস্য। তাদের ছায়া হিসেবে ছিলেন সাবেক একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights