ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ: বাড়তে পারে স্বর্ণের চাহিদা, লাভ হবে ডলারের
অনলাইন ডেস্ক
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে নজিরবিহীন যুদ্ধ চলছে। শনিবার আকস্মিকভাবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এরপর ইসরায়েলও পাল্টা হামলা শুরু করে।
নজিরবিহীন এই যুদ্ধে উভয়পক্ষে বেড়েই চলেছে লাশের সারি। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ দাবি করেছে, হামাসের হামলায় এরই মধ্যে ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজার দুই শতাধিক।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পাল্টা বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের গাজায় ৪১৩ জন নিহত হয়েছে বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজার তিন শতাধিক।
এদিকে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের এই যুদ্ধের কারণে বেড়ে যেতে পারে স্বর্ণের চাহিদা। একই সঙ্গে এতে মার্কিন মুদ্রা ডলার লাভবান হবে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ইসরায়েলে যা ঘটছে, তার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকে ইসরায়েলে এই যুদ্ধকে বাজারের প্রতি ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সহিংসতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ইসরায়েল ছেড়ে সেসব দেশে চলে যেতে পারেন, যেখানে অর্থ নিরাপদ থাকবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও ডলারের মতো সম্পদ কেনার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। এছাড়া, বিক্রি আরো বাড়তে পারে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের। বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই এখন আগ্রাসীভাবে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড কিনছেন।
স্পার্টান ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের বাজারবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পিটার কারডিলো বলেন, কেন সম্পদের ঝুড়িতে স্বর্ণ রাখা দরকার, এটি তার একটি উদাহরণ। বিশ্বে যখন বাজার টালমাটাল করা ঘটনা ঘটে, তখন তা থেকে বাঁচতে এটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা।
তিনি আরো মনে করেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের এই সংঘাত থেকে সুবিধা পাবে ডলার মার্কিন মুদ্রা ডলার। তার মতে, যখনই বিশ্বের কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তখনই ডলার শক্তিশালী হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই আর্থিক বাজারে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে আমেরিকায় সুদের হার উঁচুতে বহাল রাখা হবে। ফলে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে ডলারের দামও বাড়ছে। যদিও এ সময় শেয়ারের দাম কমেছে, তবে গত সপ্তাহে এই পতনের ধারা থেমেছে।
ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, আর্থিক বাজারের জন্য এটি বিশাল কোনো ঘটনা হবে কি না, তা নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কত সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় তার ওপর। এর মধ্যে অন্যরা জড়িয়ে পড়ে কি না, সেটির ওপরও নির্ভর করবে বিষয়টি।
তেলের মূল্যের ওপর এই ঘটনার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও ভাবছেন ব্রায়ান জেকবসেন। ইরান তেলের উৎপাদন বাড়িয়েছে। তবে হামাসের এই হামলার প্রশংসা করেছে তেহরান এবং লেবাননে তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ।
ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, ইরান তেলের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা যদি পর্দার আড়ালের আলোচনায় কোনো অগ্রগতি অর্জন করেও থাকে, হামাসের হামলাকে উদযাপন করার কারণে তা নাটকীয়ভাবে খর্ব হবে। তেলের উৎপাদন কমে গেলে তাতে সমস্যা হবে। কিন্তু তা মারাত্মক কোনো ব্যাপার হবে না।
অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, মূল দেখার বিষয় হবে সৌদি আরব কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।
ফ্লোরিডা–ভিত্তিক কাম্বারল্যান্ড অ্যাডভাইসরসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ডেভিড কটক বলেন, ওয়াশিংটনে সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছে না, সে কারণে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সূত্র: রয়টার্স