ইসলামে শিশুর অধিকার

মুহাম্মদ তাকরিম

মহান আল্লাহ আদম সন্তানকে বিশেষ সম্মান দিয়েছেন। তাদের অধিকারও সংরক্ষণ করেছেন। আদম সন্তানের বড়দের যেমন অধিকার আছে, তেমনি শিশুদেরও অধিকার আছে। নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে শিশুদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার তুলে ধরা হলো—

বেঁচে থাকার অধিকার : একসময় কন্যাশিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত হরণ করা হয়েছিল।

ইসলাম এসে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। শিশু হত্যার ভয়াবহ পরিণামের দিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?’(সুরা : তাকভীর, আয়াত: ৮-৯)
তাফসিরবিদদের মতে, মূলত সেদিন হত্যাকারীদের ভর্ত্সনা করার জন্য এভাবে প্রশ্ন করা হবে, কারণ মূল অপরাধী তো তারা। পরে তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করা হবে।

তাই প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

দুধ পানের ব্যবস্থা করা : জন্মের পর শিশুর অন্যতম অধিকার হলো, তার দুধ পানের ব্যবস্থা করা। তার যত্ন নেওয়া। তাকে সব ধরনের রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩)

বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে শিশুকে বুকের দুধ পান করানো মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেকোনো ধরনের ইনফেকশন, ডায়রিয়া ও বমি ভাব বন্ধ করার ক্ষেত্রে মায়ের দুধ ভালো রক্ষাকবচের কাজ করে। পরবর্তী জীবনে স্থূলতাসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আর মায়ের জন্য স্তন ও ওভারির ক্যান্সারে ঝুঁকি কমায়।

সুন্দর নাম ঠিক করা : নাম প্রত্যেক মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গী। তাই শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো অর্থবোধক নাম রাখা উচিত। রাসুল (সা.) পিতার ওপর সন্তানের যে কয়টি অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো, তার সুন্দর নাম রাখা ও আদব শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া।(শুআবুল ইমান)

শিশুকে ভালোবাসা : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) দিনের এক অংশে বের হলেন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন, (সেখান থেকে ফিরে এসে) হজরত ফাতিমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বললেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতেমা (রা.) তাঁকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাঁকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, তা পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে (হাসানকে) মহব্বত করো এবং তাকে যে ভালোবাসবে তাকেও মহব্বত করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২১২২)

দ্বিনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দ্বিনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করানো দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম অর্জনের ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য তাকে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করা, তার প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা এবং সাধ্য মতো তাকে সময় দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি তাকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।

খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া : শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও প্রয়োজন। এ জন্য দরকার চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। খোলা মাঠ, মুক্ত আকাশ ও বিশুদ্ধ বাতাস শিশুর মনকে প্রফুল্ল করে। তাই তাদের মাঝেমধ্যে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া উচিত।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, শিশু যখন মক্তব (বিদ্যালয়) থেকে ফিরে আসে, তখন তাকে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া উচিত। যাতে দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনার চাপ দূর হয়ে যায়। শিশুকে যদি খেলাধুলার সুযোগ না দেওয়া হয় এবং সারাক্ষণ বই-খাতা নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তার স্বতঃস্ফূর্ততা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। পড়াশোনা তার কাছে কারাগারের শাস্তি বলে মনে হবে। ফলে সে যেকোনোভাবে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য অস্থির হয়ে উঠবে। (ইহয়াউ উলুমিদ্দীন : ৩/৫৯)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights