ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা জরুরি
ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য বলতে পরিত্যক্ত বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বা পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতিকে বোঝায়। দুর্ভাগ্যবশত, ইলেকট্রনিক বর্জ্য আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান সমস্যার অংশগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসবের অধিকাংশই দূষিত করে পরিবেশকে। ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব জেনেও এগুলো ফেলা হচ্ছে খোলা মাঠে, কৃষিকাজের জমি এবং জলাশয়ের উন্মুক্ত উৎসে। ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার, হাঁপানি, স্নায়ু ভাঙ্গন, শ্রবণ সমস্যা, দৃষ্টি সমস্যা, শিশু-মৃত্যু, অক্ষম শিশুর জন্ম ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। শুধু শারীরিক নয় পরিবেশগত প্রভাব ও রয়েছে। যেমন বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, ভূমি দূষণ ইত্যাদি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ শতাংশেরও বেশি শিশু শ্রমিক ই-বর্জ্যের প্রভাবের সময় অথবা পরে মারা যায়। যা সত্যিই দুঃখজনক। যথাযথ ব্যবস্থা ছাড়াই এই ই-বর্জ্যের নিষ্পত্তি পরিবেশ দূষণের কারণ হতে পারে। সচেতনতার অভাব বা এই মেয়াদ শেষ হওয়া বর্জ্য গুলো পরিচালনা বা পুনরায় ব্যবহার করার জন্য সতর্কতামূলক তথ্যের অভাবের কারণে পণ্যগুলি মানুষকে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। ই-বর্জ্য মাটির উপাদানকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং ফসল উৎপাদনের জন্য জমি কম উৎপাদনশীল করে দিচ্ছে। উন্মুক্ত স্থানে ডাম্পিং করা হলে তা পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। একই জায়গায় বর্জ্যগুলো জমে থাকার ফলে বৃষ্টি হলে তা থেকে দূষিত জল চুইয়ে চুইয়ে আশেপাশের জলাশয়ে ও ভূগর্ভস্থ জলস্তরে মিশে পানীয় জলের দুষণ ঘটাতে পারে। সমস্যা শুরু হয় যখন এই ই-বর্জ্য ল্যান্ডফিল সাইটগুলিতে নষ্ট করা হয় বা বেআইনিভাবে ডাম্প করা হয়। এর যথাযথ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ কঠোর হওয়া উচিত।
ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়। দেশে ইলেকট্রনিক পণ্যের ডাম্পিং নিরীক্ষণের ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে ই-বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। প্রথমত, যন্ত্র ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি শেখা। এতে মোবাইল, ল্যাপটপ ও ট্যাব বেশিদিন ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া গুরুত্ব দিতে হবে পুরোনো সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানোর ওপর। একই যন্ত্র একাধিক কাজ করবে এমন মাল্টিপারপাস ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, একই চার্জারে সব সংস্থার সব মডেলের মোবাইল চার্জ করা যায় এমন চার্জারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। চতুর্থত, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ইউনিফরমের ব্যবহার, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কিছুটা সুফল মিলবে।এছাড়া, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ব্যবহার এবং ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেও এই সমস্যার নিরসন ঘটানো সম্ভব হবে। শুধু একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় এই সমস্যা নিরসন করা। তাই আমাদের উচিত যত্র তত্র ই-বর্জ্য না ফেলা এবং পরিবার এবং সমাজের অন্যদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।