একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে চার ইউনিয়নের মানুষ

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর একটি সেতুর অভাবে চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। প্রতিদিন ট্রলারে করে নদ পাড়ি দিয়ে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষ আড়িয়াল যাতায়াত করছে। সবচেয়ে বেশী বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন চরাঞ্চলের শিক্ষার্থী ও কৃষকেরা। নদী পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে যেতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চর মানাইর, চরনাসিরপুর, ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়ন এবং মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়ন থেকে ভাঙ্গা বা সদরপুর যেতে হয় দরগাবাজার ঘাট হয়ে। আর এসব ইউনিয়নের লোকজনকে বিভিন্ন স্থানে যেতে পাড়ি দিতে হয় আড়িয়াল খাঁ নদ।

চরাঞ্চল থেকে এ পাড়ের হাট-বাজার, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় ৩০ হাজার মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলের মানুষ আড়িয়াল খাঁ নদের দরগাবাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেতুর অভাবে উপজেলা থেকে চারটি ইউনিয়ন প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকায় চরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সেবা, ফায়ার সার্ভিস সেবা, কৃষিসেবাসহ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, দরগা বাজার এলাকায় একটি সেতু হলে তারা সব বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবেন। তাদের কৃষি পণ্য আনা নেবার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সূচনা হবে। চরনাসিরপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল হোসেন, হোসেন ব্যাপারী জানান, সেতু না থাকায় তারা বেশ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ফরিদপুর সদরে নিতে পারেন না। তাছাড়া ট্রলারে করে জিনিসপত্র আনা নেওয়া করতে গিয়ে তাদের খরচ বেশি হচ্ছে।

মোসা. আলেয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, মহিলাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। কোন মহিলার প্রসব বেদনা উঠলে তাকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যায় না। অনেক সময় ঘাটে ট্রলার না থাকায় রোগী মারাও যায়। সন্ধ্যার পর ট্রলার বন্ধ থাকায় কেউ ইচ্ছে করলেও উপজেলা সদরে যেতে পারেন না।

ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, চরাঞ্চলে কোন ঝামেলা হলে থানা থেকে পুলিশ আসতে পারেনা। ফলে অনেক সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তাছাড়া এসব চরগুলোতে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলে আসছে।

স্কুল শিক্ষার্থী মো. হাসিবুল ও রুনা বেগম জানান, পরীক্ষার সময় ট্রলারের অপেক্ষায় থেকে ঠিকমতো ট্রলার ধরতে না পারায় হলে প্রবেশ করতে হয় অনেক পরে। এতে করে আমাদের শিক্ষা জীবন থমকে যেতে বসেছে।

নাসিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর খান বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি একটি সেতুর। কিন্তু সেতুটি নির্মাণে কোন সরকারই আমলে নেয়নি। দরগাবাজার এলাকায় একটি সেতু হলে চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হবে। আমরা চাই বর্তমান সরকারে সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেবে।’

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মোমিন বলেন, দরগাবাজারে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যদি আমাদের কোনো প্রকল্প বা ডিপিপির মাধ্যমে এটা অনুমোদিত হয়, তবে আগামীতে সেতুটি এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি ভালো কোনো সংবাদ আমরা চরাঞ্চলের মানুষকে দিতে পারবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights