কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত তাঁতিরা

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

‘শীত এলেই হামার কদর বাড়ে যায়। শীত গ্যালে শ্যাষ। এভাবে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন দেনা মহাজন বেশি হয়ে যায়। পরে আবার শীত আসে। তখন সুতা নিয়ে আসে আবার কম্বল তৈরি করে বিক্রির টাকায় মহাজনের ঋণ পরিশোধ করি। তখন ঘুরে ফিরে শীতও গেল, আবার অভাবও ফিরে আসিল।’ বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশরবাড়ী তাঁতপল্লীর কারিগর সচিন। একসময় তাঁতপল্লীর ৫০০ তাঁতের খটখট শব্দে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশরবাড়ী এলাকা মুখরিত হলেও এখন পুঁজির অভাবে তা প্রায় বন্ধের পথে। পৈতৃক পেশা ছাড়তে না পারায় ধারদেনা করে কোনোভাবে টিকে আছেন তাঁতিরা। তবে প্রতি শীতে বাড়ে তাদের ব্যস্ততা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার ৫০০ পরিবারের প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ বংশানুক্রমে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই দু-তিনটি করে তাঁত রয়েছে। এর কোনোটা চাকাওয়ালা, কোনোটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। কম্বল তৈরি করায় কারও তাঁত সচল আর কারওটা অচল হয়ে পড়ে আছে। সকাল থেকেই নারী-পুরুষ সবাই কম্বল তৈরির কাজে ব্যস্ত হলেও অনেক পরিবার জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করেছে।

রবিন নামে এক তাঁতি বলেন, ‘গত বছর ৪০ কেজি সুতার দাম ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। এবার ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। ৪০ কেজি সুতা দিয়ে ২০-২২টি কম্বল তৈরি হয়। কম্বল বিক্রি করে কোনোভাবে আসল টাকা পাওয়া যায়। প্রতি বছর লোকসান হচ্ছে। লোকসানে এলাকার শিবু, টিপু, চন্দনসহ অনেক তাঁতি বাড়িছাড়া হয়েছেন। আগে সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও আমাদের কাছ থেকে কম্বল কিনে নিত। এখন বাজারে কম দামের কম্বল চলে আসায় আমাদেরগুলো কেউ নেয় না।’
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে এবং তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে সুযোগসুবিধা দেওয়াসহ তাদের কম্বল বাজারজাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights