কুষ্টিয়ায় পুলিশের চাকরি পেলেন ৭৪ জন নারী-পুরুষ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাংদিয়া গ্রামের আরেজুল ইসলামের সম্বল বলতে পৈতৃক ভিটার ৫ কাঠা জমি। তার আবার ভাগিদার ২ ভাই ও ৪ বোন। নিজের কোনো জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষাবাদ করেন। আবার অনেক সময় দিনমজুরি করে সংসার চালান। অভাব-অনাটনের মধ্যেই দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় ছেলে আশিকুর রহমান রাজিব অনার্সে পড়ছেন। ছোট ছেলে রকিবুল হাসান বিজয় পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে।
দিনমজুর আরেজুল ইসলাম জানান, বড় ছেলে তার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশের চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়ায়। ছেলের চাকরি পেতে কোথাও কোনো টাকা-পয়সা ঘুষ দিতে হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করায় যেখানে কঠিন, সেখানে ঘুষ দেব কোথা থেকে।
চাকরি পাওয়া মো. হামিন (১৯) গত বছর কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তার বাবা বাবর আলী ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোলদাগ মোসলেমপুর গ্রামের জিকে কোয়ার্টারে বসবাস করেন। পেশায় দিনমজুর বাবর আলী জানান, নিজের কোনো জায়গা-জমি নাই। একবেলা খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তাদের। ছেলে হামিন প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। ছেলের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হওয়ার সংবাদ শুনে তার খুশির কোনো সীমা নেই।
শুধু হামিন বা আশিকুর রহমানই নয়, কুষ্টিয়ায় মাত্র ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশের চাকরি পেয়েছেন ৭৪ জন নারী-পুরুষ। তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।
সদ্য পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া ৭৪ জন এবং তাদের অভিভাবকদের সামনে হাজির করে এ উপলক্ষে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, আমি এবং আমার টিম যারা চাকরি পেয়েছে, তাদের কাছ থেকে যদি একটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছি, এমন প্রমাণ যদি কেউ দেখাতে পারেন, তাহলে আপনারা যে শাস্তি দেবেন, তা মাথা পেতে নেব।
তিনি জানান, যখন এদের লাইনে দাঁড় করানো হয়, তখন মাইকে একটি ঘোষণা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তোমরা কাউকে একটি টাকা ঘুষ দেবে না। যদি তোমাদের কাছে কেউ ঘুষ দাবি করে তাহলে আমাকে কিংবা থানায় ফোন করে জানাবে। আমার ওপর আস্থা রাখতে পারো। যদি তোমার যোগ্যতা থাকে তাহলে এমনিতেই চাকরি হবে। তাই কাউকে চাকরির জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চাকরির জন্য ২৫০২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ৩৪১ জন পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। একজন প্রার্থী বাদে সবাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ ১২৩ জনকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ডাকা হয়। মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৭৪ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। এদের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ এবং নারী পাঁচজন।
সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কামরুল হাসান, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ফিরোজ কবিরসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে নিয়োগপ্রাপ্তদের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং অভিভাবকসহ সকলকে মিষ্টি মুখ করান।