কৃতজ্ঞতা আদায়ের উপকারিতা ও পদ্ধতি

মুফতি আইয়ুব নাদীম

কোরআন ও হাদিসের অতি পরিচিত একটি শব্দ শুকরিয়া। যাকে বাংলায় কৃতজ্ঞতা বলে আখ্যায়িত করা হয়। ইসলামের পরিভাষায় শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা হলো অনুগ্রহ স্বীকার করা এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় তার আনুগত্য করা এবং অবাধ্যতা ও নাফারমানি থেকে বেঁচে থাকা।

কৃতজ্ঞতা মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পরকালীন সমৃদ্ধির পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আরো অধিক পরিমাণ নিয়ামত লাভের মাধ্যম এ কৃতজ্ঞতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘খেয়ে যে আল্লাহর শোকর আদায় করে সে ধৈর্যশীল রোজাদার ব্যক্তির সমান পুরস্কার লাভ করবে।’ (ইবনে মাজা, হাদিস : ১৭৬৫)।

কৃতজ্ঞতা আদায় সফলতা বৃদ্ধি করে

মানুষ তার সাধ্যের ভেতরে চেষ্টা করে, আল্লাহ তা পূর্ণতা দান করেন, সফলতা দান করেন। প্রত্যাশিত বিষয় অর্জনের পর বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে, আল্লাহ তাআলা তখন সফলতাকে আরো অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সেই সময়টাও স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদের আরো বেশি দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে জেনে রেখ, আমার শাস্তি অতি কঠিন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)।

অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যারা কৃতজ্ঞ বান্দা, আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দেবেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। মুমিনের সুখ এলে, আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে; ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর দুঃখ এলে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)।

কৃতজ্ঞতা আদায়ের পদ্ধতি

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের কোরআন-সুন্নাহ সম্মত কয়েকটি পদ্ধতি আছে, নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

জবানের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় : অর্থাৎ ভাষার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। প্রাপ্ত নিয়ামতের জন্য আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আর জায়গায় জায়গায় যত মাসনুন দোয়া, তসবি-তাহলিল আছে, সেগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়া। যেমন- ঘুম থেকে উঠে বলা সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর আবার জীবন দান করেছেন। আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্র করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ৩১১২)
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া

আদায় : অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া হলো নামাজ আদায় করা এবং বেশি বেশি নেক আমল করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের প্রতিটি মূহূর্তে কার্যকারণ পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায়ের আরেকটি দিক হলো, শরীরের দান করা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সদকাহ দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। দুজন মানুষের মধ্যে ইনসাফ করা হচ্ছে সদকা, কোনো আরোহীকে তার বাহনের ওপর আরোহণ করতে বা তার ওপর বোঝা ওঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সদকা, ভালো কথা হচ্ছে সদকা, নামাজের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সদকা এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সদকা।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৯)।

শারীরিক শুকরিয়া আদায় : অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সব নিয়ামত ভোগ করে, শরীরের শক্তি সঞ্চার করে, আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট হওয়া।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের জীবিকারূপে যে উত্কৃষ্ট বস্তুসমূহ দিয়েছি, তা থেকে (যা ইচ্ছা) খাও এবং আল্লাহর শোকর আদায় করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭২)।

অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুলরা! তোমরা পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে (যা ইচ্ছা) খাও এবং সত্কর্ম করো। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আমি সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights