গণ-অভ্যুত্থানের সহযোগীদের বাদ দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করছেন: ফরহাদ মজহার
নিজস্ব প্রতিবেদক
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, যারা হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য ফিরিয়ে আনতে চান, তারা সাবধান হয়ে যান। ফরহাদ মজহার বলেন, এই সরকারের প্রথম কাজ হবে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলোচনা করে স্বাধীন গণমাধ্যম ও সম্প্রচার নীতিমালা করা। গণ-অভ্যুত্থানের সহযোগীদের বাদ দিয়ে, এই সরকারের যারা একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা ভুল করছেন।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের গণমাধ্যম থেকে অপসারণ, নিয়োগ কমিশন গঠন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তি পছন্দে নিয়োগ, মব ভায়োলেন্সের প্রতিবাদে আয়োজিত গণপ্রতিরোধ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। উক্ত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দার্শনিক ফরহাদ মজহার। আজ সোমবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সমন্বয়ক, সাংবাদিক, কবি ও শিল্পী আমিরুল মোমেনীন মানিক।
ফরহাদ মজহার সাম্প্রতিক সংঘটিত মব জাস্টিস ও মাজার ভাঙার ঘটনায় ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মব জাস্টিসের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-তরুণদের বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। বৈষম্যহীনতার প্রধান লক্ষ্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বদলানো। যারা বাবরি মসজিদ ভেঙেছে, তারাই মাজার ভেঙেছে। মাজার ভাঙা একটি ইসরাইলি প্রকল্প, ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ইসরাইল গুঁড়িয়ে দিয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীরা গণ-অভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, এখন দেশগঠনেও তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আমিরুল মোমেনীন মানিক বলেন, আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা বলি। কিন্তু, এদেশে কার্যত সেটা নেই। আমাদের দাবি, গণমাধ্যমে সংস্কার ও নিয়োগ কমিশন গঠন করতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দালালদের অপসারণ করতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের উচিত ছিল ফ্যাসিবাদের দালালদের অপসারণ করা, তা তারা করছে না। ফ্যাসিবাদের দালালদের অপসারণ করা না হলে শহিদের স্বপ্ন সফল হবে না। রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে। ফ্যাসিবাদকে উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, আমরা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি, এই সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। আমরা দেখছি এখনো ফ্যাসিবাদকে ধারণ ও লালন করা হচ্ছে। এর অবসান না হলে অচিরেই ডিইউজে ও বিএফইউজের পক্ষ থেকে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদ বিন রনি বলেন, এই সরকারের কাছে শহিদের আমানত রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিট অনুযায়ী সরকার পরিচালনা করতে হবে, ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের অপসারণ ও বিচার করতে হবে। নইলে শহিদের আমানত খেয়ানত করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাজমুল হাসান, কবি ও সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ, সাংবাদিক শাহীন হাসনাত, দৈনিক যুগান্তরের বিনোদন সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের সমন্বয়ক এফ আই দীপু, কবি আবিদ আজম, লেখক ও সাংবাদিক আহমেদ আল আমীন, মাহমুদুল আলম, সাম্য শাহ্, নাসিম আহমেদ, মামুন সারওয়ার, আহমাদ মতিউর রহমান, কবি জব্বার আল নাইম, কবি ও সাংবাদিক শাহীন রেজা, সাংবাদিক মানিক মুনতাসীরসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জহিরুল ইসলাম টুটুল।