চুরির অপবাদে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর শরীরে আগুন, মামলা দায়ের
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে এক যুবককে গাছে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন এবং শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রাণভিক্ষার আকুতি জানালেও রেহাই পাননি তিনি। এই নৃশংস নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী জাহেদ মিয়া বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) হবিগঞ্জ আদালতে নির্যাতনকারী ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক শাহেদ আলী মামলাটি আমলে নিয়ে বাহুবল থানার ওসিকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামের একটি বাড়ি থেকে দুটি মোবাইল ফোন চুরি হলে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে শহীদুল মিয়াকে আটক করে মারধর করা হয়।
পরে বনদক্ষিণ গ্রামের জাহেদ মিয়াকে ডেকে এনে নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে তার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চুরির দায় স্বীকার করতে চাপ দেওয়া হলেও জাহেদ তা অস্বীকার করেন এবং নির্যাতন বন্ধের জন্য বারবার আকুতি জানান।
দীর্ঘ নির্যাতনের পর তার পরিবারের লোকজন মোবাইলের মূল্য পরিশোধের শর্তে তাকে ছাড়িয়ে আনেন এবং গুরুতর অবস্থায় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জাহেদের শরীরের প্রায় ১৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
হাসপাতালের শয্যায় কাতরানো জাহেদ বলেন, “আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে ডেকে এনে মেহগনিগাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়। এরপর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমার দাদা সব টাকা পরিশোধের কথা বলে আমাকে ছাড়িয়ে আনেন।”
জাহেদ মিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুতুব উদ্দিন জুয়েল বলেন, “জাহেদ মিয়া একজন দর্জি, তার মোবাইল চুরির প্রয়োজন নেই। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে যে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন।”
বিচারক ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মামলা গ্রহণ করে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্যাতনের ঘটনায় বনদক্ষিণ ও যমুনাবাদ গ্রামের ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন: আব্দুল ওয়াদুদ, আ. মালিক, ছালিক মিয়া, মোজাহিদ মিয়া, আমির আলী, আলমগীর, রুয়েল মিয়া, সোহেল মিয়া, কবির মিয়া, কাজল মিয়া, তাজল মিয়া, সুমন মিয়া, জামাল মিয়া।
বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটি দেখেছি। মামলার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমির আলী নামে একজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”