ছাত্র আন্দোলনে নিহত রাসেলের পরিবারকে সহায়তা নিহত শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক

‘মাগো তোমার তিন ছেলের মধ্যে আমি যদি দেশের জন্য চলে যাই, তুমি দুই ছেলেকে নিয়া থাকবা, অনুমতি দাও মা, দাবি রাখবা না’। গত ৪ আগস্ট রাতে মায়ের সঙ্গে মোবাইলে শেষ এই কথাগুলো বলেছিলেন রাসেল। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘জন্ম নেওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, মৃত্যু হওয়া সময়ের ব্যাপার’। এরপরই এই তরুণ নিজেকে উৎসর্গ করে দিলেন স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে।

গলাচিপা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে চরকাজল সোমবাড়িয়া বাজার। বাজার থেকে একটি ফসলের ক্ষেতের মধ্যে চারদিকে পানি আর মাঝখান মাটির ভিটিতে টিনের চৌচালা একটি ঘর। এ ঘরেই বসবাস করতেন গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত মো. রাসেল মাহমুদ। ঢাকার কেরানীগঞ্জের সোনারগাঁও কলেজের ছাত্র ছিলেন রাসেল।

পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়ার জন্য কাঁচামালও বিক্রি করতেন। আশা ছিল পড়াশোনার পর একটা চাকরি করবেন। নিজেকে করবেন স্বাবলম্বী। কিন্তু তাঁর সেই আশা বুলেটের সঙ্গে মিশে যায়।
নিথর হয়ে যায় প্রাণ। রাসেলের বাবা ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন। বড় ভাই মিরাজ এলাকায় কৃষিকাজ করেন। বাবা ও বড় ভাই—এ দুজনের আয় দিয়েই সংসারের খরচ চলত। রাসেল প্রাইভেট পড়িয়ে আবার কখনো কাঁচামাল বিক্রি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন।

পড়াশোনা করে একটা ভালো চাকরি করে অভাবের সংসারের হাল ধরার ইচ্ছা ছিল তাঁর। নিয়তি রাসেলের সেই আশা পূরণ হতে দেয়নি। স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত দেহটা লুটিয়ে পড়ে পিচঢালা রাজপথে। পাশে থাকা সঙ্গীরা দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ৬ আগস্ট বাবা আবু সালেহ মর্গ থেকে রাসেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি গলাচিপা চরকাজলের ছোট চর শিবা গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় ঈদগাহসংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করেন। এর পর থেকে পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা শোকে পাথর হয়ে আছেন। ভাই হারিয়ে ভাইয়েরা হয়ে গেছেন একেবারেই চুপচাপ। শোকার্ত এই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এক মাসের খাদ্য সহায়তা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। পরবর্তী সময়ে দরিদ্র এই পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
রাসেলের মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমি সবাইকে দেখি, কিন্তু আমার রাসেলরে দেহি না। গত ঈদের পর চাউল ভাজা, মুরারা (মুরগির) মাংস, মুড়ি লইয়া গেছে। আমার পোলাডা ওই সময় নিজের ভাত বাইররা খাওয়াইছি। যদি জানতাম ওই সময় আমার বাবার লগে শ্যাষ দেহা, হেলে বুকে জড়িয়ে রাখতাম।’—কথাগুলো বলতে বলতে জ্ঞান হারান রাসেলের মা। রাসেলের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ‘ওই দিন (৫ আগস্ট) আমি ঢাকায় দিনমজুরের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। বাড়িতে রাসেলের নানার কাছে ঢাকা থেকে ফোন করলে তিনি আমাকে ঘটনা জানান। তখন ঢাকা মেডিক্যালে অনেক খোঁজাখুঁজি করে মর্গে ছেলের লাশ পাই।’ নিহত রাসেলেন নানা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রাসেল অত্যন্ত বিনয়ী ছিল। ওর খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে একটা চাকরি করার। বসুন্ধরা শুভসংঘ অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা আশা করব, এভাবেই অসহায়দের পাশে থাকবে বসুন্ধরা শুভসংঘ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights