জব্বারের বলি মঞ্চে শাহ জালালের মধুর প্রতিশোধ
মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম
আবদুল জব্বারের বলি খেলার টানা তিন আসরের ফাইনালিস্ট কক্সবাজারের তারেকুল ইসলাম জীবন এবং কুমিল্লার শাহ জালাল। এবার শাহ জালাল-জীবনের দ্বৈরথের মধ্যে দুজনেরই এগিয়ে যাওয়া সুযোগ ছিল। কিন্তু নিরুত্তাপ ফাইনালে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ম্যাচে শাহ জালালকে ‘ম্যাচ ছেড়ে দেন’ জীবন। ফলে অনাসায়ে চ্যাম্পিয়ন হন গতবারের রানার্স আপ শাহ জালাল। এরমধ্য দিয়ে গত আসরের হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়ে জব্বারের বলি খেলায় দ্বিতীয় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হন শাহ জালাল।
জব্বারের বলি খেলার গত দুই আসর ধরে আধিপত্য চলছে শাহ জালাল ও জীবনের। দুজনই একবার করে চ্যাম্পিয়ন হন। গতবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন চ্যালেঞ্জিং, নক আউট পর্বে অনায়াসেই হারিয়ে দেন প্রতিপক্ষ বলিদের। সেমিফাইনালে সৃজন টেক্কা দিলেও জীবনের কৌশলে কাছে ধরাশায়ী হন তিনি। শাহ জালালও অনাসারে জিতেন প্রতিটা রাউন্ড। তাই উত্তাপপূর্ণ ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার দর্শক।
কিন্তু খেলা শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শাহ জালালের কাছে হেরে বসেন জীবন। ফলে সর্বশেষ তিন আসরে দ্বিতীয় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হন শাহ জালাল। এরআগে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখী হয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন তারেকুল ইসলাম জীবন ও সৃজন চাকমা। হাড্ডাহাড্ডি ওই লড়াইয়ে একেবারে অন্তিম মুহূর্তে সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে চলে যান জীবন। অপর ম্যাচে আবদুল নুরকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালে চলে যান গতবারের রানার্স আপ শাহ জালাল। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখী হয় সৃজন চাকমা ও আবদুল নুর। মাত্র ১০ সেকেন্ড ব্যাপ্তি এ ম্যাচে সহজেই নুরকে হারিয়ে গত আসরের মত এবারও তৃতীয় হন সৃজন। জব্বারের বলি খেলার এ আসরে শতাধিক বলি রেজিস্টেশন করলেও নক আউট পর্বে লড়েছেন ৬০ জন বলি। প্রথম পর্ব, চ্যালেঞ্জিং রাউন্ড, নক আউট পর্ব শেষ সেমিফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বলি খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে থেকে চ্যাম্পিয়নের হাতে ট্রফি তুলে দেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এরআগে আসরের উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
জব্বারের বলি খেলার ১১৪ তম আসরকে ঘিরে দুই দিন আগে থেকেই লালদীঘি আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে বৈশাখী মেলা। যাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন শত শত বিক্রেতা। হাতপাখা, শীতল পাটি, ঝাড়ু, মাটির কলস, মাটির ব্যাংক, রঙিন চুড়ি, ফিতা, হাতর কাঁকন, বাচ্চাদের খেলনা, ঢাক-ঢোল, মাটি ও কাঠের পুতুল, বাঁশি, তৈজসপত্র, আসন, চৌকি, খাট, আলমারি, ফুলদানি, তালপাখা, টব, হাড়ি-পাতিল, দা-ছুরি, কুলা-চালুনসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র উঠেছে মেলা। এ মেলা থেকেই সাংসারিক নিত্য ব্যবহার্য ও গৃহস্থালী কিনতে ভীড় করেছে হাজার হাজার ক্রেতা।
১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুবক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলিখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে বলিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলি’।