জেন বিটার যুগ শুরু

অনলাইন ডেস্ক
২০২৫ সাল। শুরু হয়ে ‘জেন বিটা’র যুগ। ফলে বছর ১৫ আগেও যে মিলেনিয়ালদের আধুনিক যুগের প্রতিভূ ভাবা হত, তারা অনেকখানি পুরনো হয়েছে। কারণ, বিটা আর মিলেনিয়াল, দুই প্রজন্মের মধ্যে ফারাক অনেক।

মিলেনিয়ালরাই হল সেই প্রজন্ম, যারা কম বয়সে ইন্টারনেট দেখেছিল। প্রথম থেকেই কম্পিউটারে চোস্ত, প্রযুক্তিতে প্রখর। ১৯৮১-’৯৬ সালের মধ্যে জন্মানো ওই প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর দুনিয়ায় রাজত্ব করেছে একদম শুরুর দিন থেকে। কিন্তু তার পরেও ২৯ বছর কেটে গেছে। স্বাভাবিক নিয়মেই পৃথিবীতে এসেছে নতুন নতুন প্রজন্ম— জেনারেশন জেড বা জেন জি এবং জেনারেশেন আলফা। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আরও এক প্রজন্ম শুরু হওয়ায় মিলেনিয়ালরা একটু বেশিই পিছিয়ে গেল।

গ্রেটেস্ট জেনারেশন (১৯০১-১৯২৭): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আবার বিশ্বজোড়া মহামন্দার সময়ও। ওই সময়ে যারা জন্মেছিলেন, তাদের যেমন আর্থিক দুর্ভোগ এবং নানা রকম কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, আবার তারা সব ছেড়েছুড়ে যুদ্ধক্ষেত্রেও গিয়েছেন দেশের হয়ে লড়তে। সেই সব বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই ‘গ্রেটেস্ট’ বা মহান তকমা পেয়েছে ওই প্রজন্ম।

সাইলেন্ট জেনারেশন (১৯২৮-১৯৪৫): ঠিক পরের প্রজন্মেই অনেক তফাৎ। এঁরা যুদ্ধ নয়, শান্তির অনুবর্তী। তাই নিয়ম মেনে চলেছেন। প্রথা ভাঙার প্রয়োজন বোধ করেননি। পরিশ্রম, আনুগত্য এবং স্বাচ্ছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিপ্লবে উদ্যোগী হননি। তাই নাম ‘সাইলেন্ট’ অর্থাৎ, নীরব।

বেবি বুম জেনারেশন (১৯৪৬-১৯৬৪): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ধীরে ধীরে আর্থিক বিকাশ শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। সেই আবহে জন্ম ‘বেবি বুম’ প্রজন্মের। তাঁদের চরিত্র অনেকটাই ইতিবাচক। তারা অনেক বেশি উচ্চাশী, তাদের ব্যক্তিবোধও বেশি। চাঁদে মানুষ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বেবি বুমারেরা, আবার ভিয়েতনামের যুদ্ধও দেখেছেন। দেখেছেন নাগরিক অধিকারের জন্য পৃথিবীজোড়া আন্দোলন।

জেনারেশন এক্স (১৯৬৫-১৯৮০): স্বাধীনচেতা প্রজন্ম। চাকরির থেকে ব্যবসার দিকে ঝোঁক বাড়ে এঁদের সময়ে। আবার বিবাহবিচ্ছেদের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। রূপান্তরকামীদের অধিকারের আন্দোলনও মাটি পায়। কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে এঁদেরই প্রথম পরিচয়।

মিলেনিয়াল বা জেনারেশন ওয়াই (১৯৮১-১৯৯৬): ইন্টারনেটের বিস্তারে বিশ্বজগৎকে হাতের মুঠোয় দেখা, আবার একই সঙ্গে পুরনো প্রজন্মের সামাজিকতা বোধের মিলমিশ রয়েছে মিলেনিয়ালদের মধ্যে। ৯/১১ হামলা, রিসেশন অনেক কিছুই দেখেছে এই প্রজন্ম। দেখেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানও। তবে মিলেনিয়ালরা বরাবর কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসম্য বজায় রাখতে পেরেছেন বলে মনে করেন সমাজতত্ত্ববিদেরা। তাদের মতে, সেটা সম্ভব হয় তাঁদের মূল্যবোধের জন্যই।

জেনারেশন জেড বা আই জেন বা জেন জি (১৯৯৭-২০১০): স্মার্টফোন আর সমাজমাধ্যমে প্রায় ডুবে থাকা প্রজন্ম। তারা রাজনীতির কথা জানে, সমাজের কথাও জানে, আবার ব্যবসায়িক বুদ্ধিও তুখোড়। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বুঝিয়েছে এরাই। কোভিড অতিমারির পরের সমাজ সম্পর্কে এদের ধারণা অনেকটা পাল্টে দিয়েছে।

জেনারেশন আলফা (২০১০-২০২৪): এখনও পর্যন্ত এরা ছোটই। তবে এদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে এআই আর স্মার্ট ডিভাইস। ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, পারসোনালাইজড লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির সঙ্গে নিয়ে বেড়ে উঠছে এরা।

জেনারেশন বিটা (২০২৫-২০৩৯): গ্রিক অক্ষর বিটা থেকেই ধার করা হয়েছে নাম। জেন বিটার অতি প্রযুক্তি নির্ভরতার কথা মাথায় রেখেই যে ওই নাম বেছে নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কারণ, তারা জন্ম নিল এমন একটা সময়ে, যেখানে সব কিছুই ডিজিটাল। যে জমানা সব সময়ে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে জুড়়ে আছে। পড়া, লেখা, কাজকর্ম সবই হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। সমাজবিদ মার্ক ম্যাকক্রিন্ডল মনে করছেন, বিটারা নিজেদের ডিজিটাল পরিচয়কে অনেক বেশি নিরাপদ করতে পারবে। আবার ডিজিটাল কাজে আরও বেশি করে ভাবনাও মিশিয়ে দিতে পারবে। এ ছাড়া, জেন বিটার মধ্যে সবাইকে নিয়ে চলার গুণও থাকবে বলে জানাচ্ছেন মার্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights