ঢাকায় অচেতন করে জাহাঙ্গীরনগরে নিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, অতঃপর…

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় চলন্ত বাসে লক্ষীপুরের এক যুবককে অচেতন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে বন্দী রেখে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। জ্ঞান ফেরার পর মারধর করে অর্ধলাখ টাকা আদায়ের পর ভুক্তভোগী যুবককে ছেড়ে দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর নাম ওয়ালিউল্ল্যাহ (৩২)। তিনি লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ভুক্তভোগী ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাশ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি জুতার কোম্পানিতে চাকরিরত রয়েছেন।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলে এ ঘটনা ঘটে।

২১৪ নং কক্ষ থেকে একটি লোহার পাইপ, চাকু, বিভিন্ন ইনজেকশন ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

এদিকে হলটির ২১৪ (এ) নম্বর কক্ষে বন্দী করে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগও করেন শেখ ওয়ালি। তিনি বলেন, ‘আমি মূলত বিকেলে বাসে করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দিই। পরে এখানে কিভাবে এসেছি এর কোনো কিছু মনে করতে পারছি না। ওই রুমে তারা ৪ জন ছিল। শুরুতে তারা আমাকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা দিতে না পারায় তারা আমাকে চাকু, লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করে। পরে আমার নগদ ৪০ হাজার টাকা ও বাড়ি থেকে ৫ হাজার টাকা বিকাশে আদায় করে তারা।

এদিকে রাত সাড়ে বারোটায় সাংবাদিক ও হল প্রশাসনের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানান ওয়ালি। এসময় তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের শাস্তি ও তার টাকা ফেরতের দাবি জানান। পরে (৯ ফেব্রুয়ারি, প্রথম প্রহরে) হল প্রশাসনের উপস্থিতিতে ২১৪ নং কক্ষে প্রাথমিক তদন্ত শেষে একটি লোহার পাইপ, চাকু, বিভিন্ন ইনজেকশন ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, বিকাশে টাকা আদায়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অসিত পালের যোগসূত্রের সত্যতা মেলেছে বলে জানায় হল প্রশাসন। এছাড়াও অসিত পাল ২১৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী বলে জানা যায়।

এবিষয়ে জানতে মুঠোফোনে অসিত পালের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হল সংলগ্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অবচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে ঘটনাটির সম্পর্কে জানাজানি হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক ও শহীদ সালাম বরকত হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্তের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে ঘটনার প্রাথমিক সত্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুন্ডু।

তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীর যাওয়ার কথা লক্ষীপুর। তাকে ঘটনাক্রমে অজ্ঞান করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। আমরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জেনেছি তার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে অপরাধীরা। যদিও ঘটনাটির সাথে একজন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবুও ওই শিক্ষার্থীর বক্তব্য না পাওয়ায় এবং বাকি তিন জন চিহ্নিত না হওয়ায় আমরা পুরোপুরি তদন্ত না করে এবিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আজ রাতে (বুধবার) ভিকটিম নিরাপত্তা অফিসে থাকবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এর বিস্তারিত তদন্ত করা হবে। ভুক্তভোগী চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ছাড়াও থানায় অভিযোগ করতে পারে।’

এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আ স ম ফিরোজুল হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights