তারল্য সংকটে মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারে হতাশা

আনিস এ খান

ব্যাংকের সম্পদ ও দায়ের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা থেকেই তারল্য সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোয় সম্পদ বাড়লেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশে আছে মন্দ ঋণ। এটি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম। এসব খেলাপি ঋণের কারণে নতুন করে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকে টাকা না আসায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। উপরন্তু পাচার হওয়া টাকা ও ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার সম্ভাবনা সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

এসব ঘটনা আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে বেশি সুদ নিতে বাধ্য হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। মন্দ ঋণে টাকা আটকে থাকায় অনেক ব্যাংক, বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের চাহিদা মেটাতে বা নতুন ঋণ দিতে পারছে না। এটি ব্যাংকগুলোর প্রতিদিনের কাজ পরিচালনা ও নতুন ঋণ দেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

আমাদের দেশে আসলে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। অডিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু ব্যাংক আসলে মার্জ করে দেওয়া উচিত। তবে এই কাজটা সময়সাপেক্ষ। অন্তত দুই বছর প্রয়োজন। আগের সরকার ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ নিলেও তা পরিকল্পিত ছিল না। তাই সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন বর্তমান সরকার যদি মার্জের কথা ভাবে, তাহলে এই প্রক্রিয়ার জন্যই আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার।

বিগত সরকারের আমলে একাধিক ব্যবসায়ী আইন ভেঙে সীমাতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কখনোই এক্সপোজার সীমা অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। কারণ এটি সুশাসনের মধ্যে পড়ে না। যেসব বড় ঋণগ্রহীতা তাদের সামর্থ্যের বাইরে ঋণ পেয়েছেন, তারা এখন ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না। একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা শুধু রমজানের পণ্য আমদানি এবং বিদ্যুৎ খাতের জন্য শিথিল করা যেতে পারে। কারণ দেশের জন্য বিদ্যুৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights