থামছে না শাহবাগের উত্তাপ চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে দাবিদাওয়ার আন্দোলন থামছে না। গতকালও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আবারও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে শাহবাগ মোড়। বিক্ষোভ হয়েছে সচিবালয়ের সামনেও।
শাহবাগ : চাকরিতে যোগদানের দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আন্দোলনে গতকালও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে দুপুরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও জলকামান নিক্ষেপ করা হয়। পরে তারা জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকালে প্রেস ব্রিফিং করে রবিবারের মধ্যে যোগদান নিশ্চিতসহ পাঁচ দাবিতে আলটিমেটাম দেন।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ চাকরিপ্রার্থীরা গতকাল সকাল থেকেই জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় শাহবাগসহ আশপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের লাঠিচার্জের মুখে চাকরিপ্রার্থী পুরুষরা শাহবাগ ত্যাগ করেন। তবে নারী চাকরিপ্রার্থীরা মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় বেশ কয়েক নারী সদস্যকে আন্দোলনস্থল থেকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। বেলা সোয়া ২টায় তাদের ওপর জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এর পরও আন্দোলনকারীরা শাহবাগ না ছেড়ে বসে ও শুয়ে পড়েন। ধাওয়া দিয়ে পুলিশ নারী সদস্যদেরও সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় চাকরিপ্রার্থীরা জাদুঘরের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। সেখান থেকেও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আড়াইটায় তারা ফের জাদুঘরের সামনে সংঘটিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকালে সেখান থেকেই প্রেস ব্রিফিং করেন আন্দোলনকারীরা। তারা পাঁচ দাবিতে রবিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- গ্রেপ্তারদের ছেড়ে দিতে হবে। আন্দোলনে পুলিশের হামলার বিচার হতে হবে। রবিবারের মধ্যে আগের রায় বাতিল করে যোগদান নিশ্চিত করতে হবে। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার শাহবাগে তাদের অবস্থান চলবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দেন হাই কোর্ট। কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়ায় আদালত এ আদেশ দেন। এরপর থেকে চাকরিপ্রার্থীরা এ রায় বাতিল করে যোগদান দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
সচিবালয়ের সামনে : নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকালে জলকামান নিক্ষেপ, লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশের অনুরোধ না শুনে আন্দোলন চালিয়ে গেলে তাদের ওপর জলকামান নিক্ষেপ করা হয়। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সিএনজিচালকদের অবরোধ : মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করলে মামলা ও জরিমানা করা হয়, আর এই মামলা ও জরিমানা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে শতাধিক সিএনজি অটোরিকশাচালক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে টেকনিক্যাল কলেজ মোড় অবরোধ করে রাখেন। বাধ্যতামূলক মিটারে সিএনজি চলাচলের সিদ্ধান্ত না মানার ঘোষণা দিয়েছেন সিএনজিচালকরা। তাদের অভিযোগ, মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পথে পথে চাঁদাবাজি, স্ট্যান্ডের নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায়সহ নানা কারণে তারা সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক অটোরিকশা চালাতে পারেন না। অতিমুনাফালোভী মালিকদের জন্য তারা বাধ্য হয়ে মিটার ছাড়া সিএনজি চালান। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশার দৈনিক জমা ৯০০ টাকা হলেও মালিকরা ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা নিচ্ছেন। আইনে শিফটিং পদ্ধতি না থাকলেও মালিকরা দুই-তিন শিফট চালিয়ে ১৬০০-১৮০০ টাকা আদায় করছেন। কোনো শ্রমিক আপত্তি জানালে চাবি রেখে দেওয়া বা চাকরি হারানো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, তাদের পক্ষে মিটারে সিএনজি চালিয়ে পরিবার নিয়ে রাজধানীতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ফোরস্টোক অটোরিকশা সিএনজি ড্রাইভারস ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, বিআরটিএ এবং মালিকদের চাপে আমরা দিশাহারা। বিআরটিএ জরিমানা করে আর মালিকদের জমা বেশি দিতে হয়। যদিও মালিকদের ৯০০ টাকা করে জমা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু মালিকরা তা মানছে না। তারা ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা জমা নিচ্ছেন। সেখানে বিআরটিএ কিছুই করতে পারছে না। উল্টো চালকদের ওপর মামলা দিয়ে জুলুম করছে। এ জন্য আমরা জরিমানা প্রত্যাহারে আন্দোলন করছি।
এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি সিএনজি ও পেট্রলচালিত অটোরিকশাকে মিটারে যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি ইস্যু করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) শিতাংশু শেখর বিশ্বাস স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আইন লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে চালকরা সরকার নির্ধারিত মিটার ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেন, তাদের বিরুদ্ধে বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা করা হবে।