নাজিম উদ্দিনে আতঙ্ক মাটিকাটা এলাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকার নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জমি দখল, হামলা, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। তার সমর্থকদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটে এলাকাবাসীর। তাদের অভিযোগ, নাজিম উদ্দিন সাধারণ মানুষের জমি দখল করে আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। শাসক দলের কয়েকজন স্থানীয় নেতা নেপথ্যে থেকে সহায়তা করায় দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠছে তার তৎপরতা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুরের এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পিতার অভাবের সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় এসে ভাষাণটেক বস্তিতে মাসিক ৩ হাজার টাকা বেতনে ভাঙ্গারীর দোকানে চাকরি নেন। ধীরে ধীরে নাজিম উদ্দিন এলাকার নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদি নামাপাড়ায় নেতার বাড়ির পাশেই নাজিম বাসা ভাড়া করেন। আব্বাস উদ্দিনের অর্থায়নে নাজিম উদ্দিন জমি কেনা-বেচার ব্যবসা শুরু করেন। নিউগিনি প্রপার্টিজ লি. নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে শুরু করেন জমি দখল। এলাকার নিরীহ দরিদ্র জমির মালিকদের টার্গেট করে নাজিম উদ্দিন জোরপূর্বক জমি দখল ও জমি ভরাট শুরু করেন। নিজের ভাই সাইফুল, শামীম, তাজুল, রেজাউলকে রাজনৈতিক ছায়া ও শেল্টার দেন সেই আওয়ামী লীগ নেতা। স্থানীয় শাহীন, নয়ন, মিলনসহ শতাধিক ব্যক্তি নিয়ে গড়ে তোলেন নাজিম বাহিনী। নামাপাড়ার জলাধার ধীরে ধীরে গিলতে থাকে নাজিম উদ্দিনের নিউগিনি প্রপার্টিজ। আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় নাজিম বাহিনী রাতের আঁধারে শত শত ড্রাম ট্রাক ভরে বালু ফেলে এলাকার নিরীহ দরিদ্র মানুষের জমি দখল করে ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে প্লট আকারে বিক্রি করতে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ বাহিনীর শত শত সদস্যসহ স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের শেষ সম্বল দিয়ে নাজিম উদ্দিনের নামসর্বস্ব কোম্পানিতে জমি কিনতে যায়। চটকদার বিজ্ঞাপন আর অল্প দামে প্লট পাওয়ার আশায় শত শত মানুষ নাজিমকে কোটি কোটি টাকা দেয়। এভাবে অবৈধ জমির ব্যবসায় আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন নাজিম উদ্দিন। জোয়ার সাহারা মৌজার আরএস ৫৬১, ৫৬২, ৫৬৫ দাগের প্রায় ১০ বিঘা জমি দলিল ও নামজারি ছাড়া অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নাজিম উদ্দিন দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত মালিকরা এসব জমির কাছে যেতে পারেন না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জোরপূর্বক দখল করা ১০ বিঘা জমিতে নাজিম উদ্দিনের বাহিনী অস্ত্র হাতে নিয়ে দিনরাত পাহারা দেয়। এলাকার সব প্রকার নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজে নাজিম উদ্দিনের সহযোগী সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে বাজারমূল্যের বেশি দামে মালামাল কিনতে বাধ্য করা হয়। নাজিম বাহিনীর বেঁধে দেওয়া চড়া দামে নির্মাণসামগ্রী না কিনলে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাজিম বাহিনীকে চাঁদা না দিলে রাতের বেলা কোনো বালুর ট্রাক ঢুকতে পারে না। ক্যান্টনমেন্ট থানায় নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় ডজন ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শূন্য হাতে ঢাকায় আসা নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া নানা অপকর্মে জড়িত থেকে বর্তমানে হাজার কোটি টাকার মালিক। জোয়ার সাহারা মৌজার ৬১০, ৬১১, ৬১২, ৬১৩, ৬১৪, ৬১৫, ৬১৬ ও ২৫৬ দাগে রয়েছে নাজিম উদ্দিনের প্রায় ২০ বিঘা জমি। বাউনিয়া মৌজার ২৫৭ নম্বর দাগের ১০ বিঘা, মিরপুর ডিওএইচএস-এ রয়েছে ৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের দুটি ফ্ল্যাট। গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ২০ বিঘা জমি।

সম্প্রতি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট বাবুল হোসেন হত্যা চেষ্টা মামলায় জেল খেটে এসেছেন নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া। জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট বাবুল হোসেন সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর তার ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে জোয়ার সাহারা মৌজার ৫৬১, ৫৬২ ও ৫৬৩ নম্বর দাগের ১০ (পাঁচ) বিঘা জলাশয় জমি ক্রয় করেন। নিজেদের টাকায় মাটি কিনে জমিতে ফেলে ভরাট করেন। ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের কর্মী হয়েও বারবার নাজিম বাহিনীর হাতে নির্মম অত্যাচারের শিকার হন তিনি। প্রায় ১৫-২০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার জমি নাজিম উদ্দিন জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। জমির কাছে গেলেই লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২১ সালে বৃদ্ধ বোরহান উদ্দিনের কাছে চাঁদা দাবি করলে তিনি দিতে অস্বীকার জানান। এরপর নাজিম বাহিনী তাকে আক্রমণ করে ও তার জমি দখল করে নেয়। এসব অভিযোগ সম্পর্কে নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। যাদের সঙ্গে জমি নিয়ে তার সমস্যা ছিল তাদের সঙ্গে মিটমাট হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ অকারণে অসত্য তথ্য প্রকাশ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights