পঞ্চগড়ে ক্ষেত থেকেই চুরি হয়ে যাচ্ছে পিঁয়াজ-রসুন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের চাষিরা এবার পিঁয়াজ ও রসুন আবাদের ঝুঁকেছে। অনেক কৃষকই নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ির আশে পাশে ক্ষুদ্র আকারে চাষ করেছে পিঁয়াজ-রসুন। অনেকে বাড়তি আয়ের জন্য চাষ করেছেন।

মুড়ি কাটা পিঁয়াজ তোলার মৌসুম চলছে। অন্যদিকে, চারা পিঁয়াজ তোলা শুরু হবে আর কিছুদিন পরেই । কিন্তু এর মধ্যেই ক্ষেত থেকেই শুরু হয়েছে পিঁয়াজ-রসুন চুরির ঘটনা। তাই চাষিরা আতঙ্কে দিন পার করছেন। চাষিরা জানান, কে বা কাহারা রাতের অন্ধকারে ক্ষেত থেকেই পিঁয়াজ-রসুন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারে পিঁয়াজের দাম চড়া। তাই চুরি হয়ে যাচ্ছে।

চাষিরা বলছেন, রাতেই ৩ থেকে ৪ কাঠা জমিতে লাগানো পিঁয়াজ তুলে পাতাগুলো কেটে ফেলে রাখে চোরেরা। এক কাঠা জমিতে প্রায় ৮ থেকে ৯ মন পিঁয়াজ হয়। ৮০ টাকা কেজি দরে বর্তমানে নতুন পিঁয়াজ বিক্রী হচ্ছে। এক কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার পিঁয়াজ হয়। রসুনের দাম আরও বেশি। পিঁয়াজ চুরি হওয়ায় অনেকে সম্বলও হারিয়েছেন। অনেক চাষি ধান বিক্রী করে পিঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন আসল টাকাও নেই। এই অবস্থায় অনেক কৃষকই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তারা জানান, রাতের অনেকে পাহারা দিলেও বাড়তি ব্যায় মেটাতে পাহারাদার রাখার ব্যবস্থা করতে পারছেন না অধিকাংশ কৃষক। এ ব্যাপারে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অস্বস্তিতে রয়েছেন। রাতের অন্ধকারে কারা এসব চুরি করছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা দুরুহ ব্যাপার মনে করছেন তারা।

তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া গ্রামের ভ্যানচালক নজিমুল ইসলাম জানান, পরিবারের চাহিদা মেটাতে ৪ কাঠা মাটিতে এবার পিঁয়াজ আবাদ করেছি। আশা করেছিলাম নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি কিছু আয় করবো। প্রায় ১৫/১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করি তা থেকে একটু একটু করে পিঁয়াজ খেতে ব্যয় করেছি। পিঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে ভোরে পিঁয়াজ ক্ষেতে গিয়ে দেখি একটা পিঁয়াজের গাছও নেই। পিঁয়াজের পাতাগুলো পড়ে আছে। এতো আশা করে পিঁয়াজ চাষ করলাম। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন নিয়েছি। আর কয়েকদিন গেলেই পিঁয়াজ তুলে নিতাম। কাকে কি বলবো। কে চুরি করলো নিজেই তো জানিনা।

একই উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন জানান, আমার নিজের কোনও জমি নেই। এক বিঘা মাটি বর্গা নিয়ে তাতেই আলু, রসুন, পিঁয়াজ আবাদ করেছি। পিঁয়াজ চাষ করেছি ৩ কাঠা। তিন কাঠা মাটিতে অন্তত ৩০ মন পিঁয়াজ উঠতো। কিন্তু গত শনিবার সকালে পিঁয়াজ ক্ষেটে গিয়ে দেখি একটি পিঁয়াজও নাই। যা ব্যায় করেছি সব শেষ। সারাদিন কাজ করি। রাতের একটু ঘুমাই। পাহাড়া দেবো কিভাবে। পাহারাদার পাওয়াও তো যাবেনা। পাওয়া গেলেও ব্যায় তো বেড়ে যাবে। যারা এসব করছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ।

পঞ্চগড় কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদেক জানান, চলতি বছর পঞ্চগড়ে ৮৫২ হেক্টর জমিতে রসুন এবং ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজের আবাদ হয়েছে। দিন দিন রসুন-পিঁয়াজের আবাদ বাড়ছে। ক্ষেত থেকে পিঁয়াজ-রসুন চুরি হয়ে যাচ্ছে খবর পেয়েছি। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights