পবিত্র হজ পরবর্তী করণীয় ও বর্জনীয়

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সৌদি আরবসহ সমগ্র বিশ্ব থেকে ৮,৯৯,৩৫৩ জন মুসলিম হজব্রত পালন করেছেন। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছেন ৬০ হাজার ১৪৬ জন। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বায়তুল্লাহর মেহমানরা ফিরতে শুরু করেছেন তাদের স্বদেশে। ফিরছেন তাঁরা নিষ্পাপ হয়ে, কলুষমুক্ত পবিত্র আত্মা নিয়ে, বায়তুল্লাহর সৌরভ ও মদিনার আবেশ নিয়ে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এক ওমরাহ আদায়ের পরবর্তী ওমরাহ পালন মধ্যবর্তী গুনাহগুলোর জন্য কাফ্ফারাস্বরূপ। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান হলো নিশ্চিত জান্নাত। (বুখারি : ১৭৭৩)।

হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো হাজি সাহেবের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হলে তাঁকে সালাম করবে, তাঁর সঙ্গে মুসাফাহ্ করবে এবং তিনি নিজ ঘরে প্রবেশের আগে তার কাছে দোয়া কামনা করবে। কারণ তিনি নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এসেছেন। (ইবনে মাজাহ : ৩০০৪)।
প্রিয় নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, হজ ও ওমরাহকারীরা হচ্ছে আল্লাহর মেহমান, তারা যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। আর যদি তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ : ২৮৯২।

মুসলিম জীবনে হজের সফর নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যময়। বায়তুল্লাহর মেহমান হতে পারা সত্যিই পরম সৌভাগ্যের। হাজিরা যদি বরকতময় এ সফরের মাধ্যমে চিরস্থায়ী কল্যাণ অর্জন করতে চায়, তাহলে প্রত্যেক হাজিকে হজ থেকে ফিরে এসে হজের প্রকৃত শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলন করতে হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজেকে বদলানোর; যাতে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসা পুণ্যময় দেহ ও আত্মায় গুনাহের কালিমা আর না লাগে।

বায়তুল্লাহ জিয়ারতের মাধ্যমে শপথ নিতে হবে ধৈর্য, উদারতা ও হালাল রুজির। আরাফার বিশাল ময়দানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থানের মাধ্যমে ওয়াদা করতে হবে বিদায় হজে রসুলে আরাবির (সা.) দেওয়া ভাষণের মর্মবাণীগুলো বাস্তবায়ন করার। অন্তর থেকে মুছে ফেলতে হবে অহংকারের কালিমা। কঙ্কর নিক্ষেপের মাধ্যমে দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করতে হবে বিতাড়িত শয়তানের সব ধরনের ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার। কোরবানির মাধ্যমে শিক্ষা নিতে হবে নিজের পশুত্বকে বিসর্জন দেওয়ার।

সর্বোপরি মদিনা মুনাওয়ারা গিয়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারতের মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্র তথা জীবনের সব স্তরে রসুল (সা.)-এর আদর্শ বাস্তবায়নের ইস্পাতকঠিন দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, হজ থেকে ফিরে এসে অনেক হাজি সেই শপথ, সংকল্প ওয়াদা ও অঙ্গীকারের কথা বেমালুম ভুলে যান। শয়তানের ধোঁকা এবং পার্থিব দুনিয়ার মোহে হাজারো গুনাহের জালে জড়িয়ে পড়েন।

হজ পালনকারী মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান এবং বিপুল সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। সুতরাং এ সম্মান ও মর্যাদার দিকে লক্ষ রেখে পরবর্তী জীবন তাকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে হবে। পরিশেষে দয়াময় আল্লাহর কাছে এই ফরিয়াদ, হে পরোয়ারদিগার! বায়তুল্লাহর প্রত্যেক মেহমানকে হজের মৌলিক শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলন করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙা প্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights