পরকীয়ায় ব্যর্থ হয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শাহনাজ আক্তার পিংকি নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে সড়কে পথ আটকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন খালেদ সাইল্ল্যা নামে দূর সম্পর্কের এক দেবর। এ সময় গৃহবধূর সাথে থাকা শ্বশুর রেজাউল হককেও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়। নিহত পিংকি দুই ছেলের জননী।
পিংকি মঙ্গলবার দুপুরে শ্বশুরের সাথে বাবার বাড়ি যাওয়ার পথে পৌর হাজিপুর ৪নং ওয়ার্ডের মাইল্লা বাদশা মিয়ার বাড়ির সামনে পৌঁছলে খালেদ সাইফুল্ল্যা পথ রোধ করে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। এতে পিংকি ও তার শ্বশুর গুরুতর আহত হন। আহত পিংকিকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় বোন ফারজানা আক্তার সুমি বলেন, পারিবারিকভাবে ১৬ বছর আগে পিংকির সাথে জাহাঙ্গীরের বিয়ে হয়। ঘাতক খালেদ পিংকির দূর সম্পর্কের চাচাতো দেবর হয় এবং একই বাড়ির বাসিন্দা। বছর খানেক আগে পিংকির ব্যবহৃত মোবাইল নষ্ট হয়ে যায়। স্বামী প্রবাসে থাকায় তার বড় ছেলের মাধ্যমে সেটি বাজার থেকে ঠিক করে আনতে দেয় খালেদকে। ওই সময় খালেদ মোবাইল থেকে পিংকির স্বামীকে পাঠানো ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও নিজের মুঠোফোনে নিয়ে নেয়। এরপর ওই ছবি ও ভিডিও দিয়ে পিংকিকে ব্ল্যাকমেইল করে সাত লাখ টাকা আদায় করে। একই কায়দায় পরকীয়া ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা চালায়। এরপর সে আরও টাকা দাবি করে এবং পরকীয়ায় ব্যর্থ হয়ে পিংকিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। কিছু দিন আগে এ নিয়ে আদালতে মামলা করে পিংকি। গত দুই মাস আগে পিংকির স্বামী দেশে আসলে এসব বিষয় নিয়ে তার ওপর হামলা করে খালেদ। এরপর বিভিন্ন সময়ের ছবি-ভিডিও ইন্টানেটে ছেড়ে দেবে বলে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় এবং ধাপে ধাপে সাত লাখ টাকা আদায় করে। এখন আবার নতুন করে টাকা দাবি ও পরকীয়ায় সাড়া না দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
নিহতের দুলাভাই বাবর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার স্বামীর বাড়ি থেকে শ্বশুর রেজাউল হকের (৭২) সাথে চৌমুহনী পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডে বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন পিংকি। ওই সময় তারা চৌমুহনী পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাদশা মিয়ার বাড়ির সামনের সড়কে পৌঁছলে খালেদ তাদের গতি রোধ করে। সেখানে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পিংকিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খালেদ। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তখন পুত্রবধকেূ বাঁচানোর চেষ্টা করলে শ্বশুর রেজাউল হোসনকেও ছুরিকাঘাতে গুরুত্বর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা পিংকি ও তার শ্বশুরকে উদ্ধার করে চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিংকিকে মৃত ঘোষণা করেন।
চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবু তালেব বলেন, পিংকিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার পরনে বোরকা ছিল, এজন্য শরীরে আঘাতের চিহ্ন বোরকা খুলে দেখা হয়নি। পরে নিহতের স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে যায়।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, ঘাতক সাইফুল্ল্যাকে আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।