প্রকল্পেই আটকে চার লেনের স্বপ্ন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

প্রায় এক দশক আগে নাটোরের বনপাড়া থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। মহাসড়ক নির্মাণে ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে সড়ক ও জনপথের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও তখন এতে সার্ভিস লেন ধরা হয়নি। সার্ভিস লেন যুক্ত করে আবারও সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নতুন নকশার কাজ চলছে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) হবে। এখন পর্যন্ত যে গতিতে কাজ হচ্ছে, তাতে মহাসড়কের কাজ শুরু করতে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। নাটোরের বনপাড়া থেকে রাজশাহী সড়কটি এখন দুই লেনের। মাঝে নেই সড়ক বিভাজক বা ডিভাইডার। এতে প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমের (সাসেক পরিকল্পনা) আওতায় ইতোমধ্যে ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়কের হাটিকুমরুল থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ১২১ কিলোমিটার। ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট (উইকেয়ার) পরিকল্পনায় যশোর থেকে বনপাড়া হয়ে হাটিকুমরুল করিডর আছে। মহাসড়কটি হাটিকুমরুল থেকে বনপাড়া, পাবনার দাশুড়িয়া-লালনশাহ সেতু-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে। বনপাড়া থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর সোনামসজিদের দূরত্ব ১৪৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বনপাড়া-রাজশাহী-সোনামসজিদ মহাসড়ক উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগও উন্নত করবে।

প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, চার লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণও করতে হবে। জায়গা লাগবে ১৬০ ফুটের মতো। এখন আছে ৮০ থেকে ১২০ ফুটের মতো জমি। এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার কাজ করে। ঢাকা-রংপুর এবং বনপাড়া-যশোর মহাসড়কে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।

নিরাপদ সড়ক চাই রাজশাহী জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌফিক আহসান টিটু বলেন, দ্রুত ও ধীরগতির যানবাহন একই সঙ্গে চলছে। সার্ভিস লেন ও ডিভাইডার নেই। এতে দুর্ঘটনা হচ্ছে। তা রোধে চার লেন মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ অবশ্যই দ্রুত নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পালন মনে করেন, উত্তরাঞ্চল সব সময়ই বৈষম্যের মধ্যে থেকেছে। এখনো উত্তরবঙ্গ এ বৈষম্যের শিকার। রংপুরসহ দেশের অন্য বিভাগে বড় বড় মহাসড়ক হলেও রাজশাহীতে হচ্ছে না। কেন প্রকল্পটিতে গতি সেই, সেটি ভাববার বিষয়।

রাজশাহীর তালাইমারী থেকে কাটাখালী পর্যন্ত ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করেছে সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হয়েছে ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সড়কের মাঝে আছে দুই মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুপাশে ১০ দশমিক ৫ মিটারের সড়ক। সড়কের উভয় পাশে তিন মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও উভয় পাশে তিন মিটার ফুটপাত ও ড্রেন। সড়কটির সৌন্দর্য বর্ধনে ডিভাইডার ও সড়কের উভয় পাশে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ফলে সরু সড়ক থেকে চওড়া সড়কের পর আবার সরু সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। এতে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন প্রকৌশলীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights