ফিকাহ সংকলনে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর কর্মপন্থা
উম্মে আহমাদ ফারজানা
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর উস্তাদ ছিলেন ইমাম হাম্মাদ (রহ.)। তার ইন্তেকালের পর ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর অন্তরে ফিকাহ সংকলনের চিন্তা উদিত হয়। তত দিনে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিসীমা সিন্ধু থেকে স্পেন পর্যন্ত, আর আফ্রিকা থেকে এশিয়া মাইনর পর্যন্ত। সংগত কারণে ইবাদত-আমল, সামাজিকতা ও লেনদেনের ক্ষেত্রে দিন দিন এত সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল যে একটি বিন্যস্ত আইনবিধি ছাড়া শুধু বর্ণনার ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের পক্ষে পর্যালোচনা করে সমাধানের ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না।
তাই ইমাম আবু হানিফা (রহ) এই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন। তিনি ফিকাহ সংকলনের জন্য ৪০ জন তৎকালীন বিখ্যাত ইসলামী আইনজ্ঞের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করেন। এই ফিকাহ মজলিসে প্রশ্নের আলোকে কোনো মাসআলা উত্থাপন করে সদস্যদের প্রত্যেককে সে বিষয়ে মতামত পেশ করতে বলতেন এবং আলোচ্য বিষয়ে প্রত্যেকের অভিমত পর্যালোচনা করতেন। সদস্যরা তাদের জ্ঞানগর্ভ অভিমত, যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি পেশ করতেন।
তিনি মনোযোগসহ সবার মন্তব্য শুনতেন এবং নিজের অভিমত প্রকাশ করতেন। সদস্যদের সবাই কোনো প্রশ্নের জবাবে ঐকমত্য পোষণ করলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তরূপে তা নথিবদ্ধ করা হতো।
এই সিদ্ধান্তগুলো লিখন ও সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন আসাদ ইবনে ওমর, ইয়াহইয়া ইবনে জাকারিয়া ইবনে আবু জায়েদ এবং ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)। কোনো মাসআলায় মতপার্থক্য দেখা দিলে বিষয়টি নিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে তর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হতো।
যুক্তি, পাল্টা যুক্তির ধারায় কখনো কখনো একটি বিষয়ের আলোচনা চলত মাসের পর মাস ধরে। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ) অত্যন্ত নীরবতার সঙ্গে সবার যুক্তি-প্রমাণ শ্রবণ করতেন।
আলোচ্য বিষয়টি কোনো একদিকে প্রাধান্য পেলে তা অভীষ্ট সিদ্ধান্তের রূপ পরিগ্রহ করত এবং তখন তা নথিবদ্ধ করা হতো। কখনো কখনো এমন হতো যে ইমাম সাহেবের সিদ্ধান্ত প্রদানের পর কোনো সদস্য স্বীয় অভিমতে অটল ও অবিচল থাকতেন, তখন সেসব ভিন্ন মতামতসহ সবার অভিমত নথিবদ্ধ করা হতো। আর মজলিসে দৃঢ়ভাবে এ নিয়ম মেনে চলা হতো যে বিশিষ্ট সদস্যরা সবাই উপস্থিত না হলে কোনো মাসআলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হতো।
এভাবে দীর্ঘ ২২ বছর ফিকাহ সংকলনে তিনি তার অসামান্য অবদান রেখে যান এবং ‘হানাফি ফিকাহ’ সংকলন করেন। এ সংকলন সমষ্টিতে ৮৩ হাজার মাসআলা নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। এ সকংলন সমষ্টির বিন্যাস ছিল প্রথমে তাহারাত, পরে সালাত অধ্যায় এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য ইবাদতে। অতঃপর মুয়ামালাত ও অন্যান্য অধ্যায়। এ সংকলন সমষ্টি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর জীবদ্দশায়ই সমাদৃত হয়। (সূত্র : ইসলামের ধর্মীয় নীতি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি)