ফুসফুস ক্যান্সারের স্ক্রিনিং কাদের জন্য জরুরী?

বিশ্বব্যাপী নভেম্বর মাসকে ফুসফুসের ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। এই উপলক্ষে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের পক্ষ থেকে বিশেষ এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ বছর ফুসফুস ক্যান্সার সচেতনতা মাসের প্রতিপাদ্য Education, Empowerment, and Eradication. আর এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন্ সচেতনতামূলক আলোচনা করেন হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার অন্যতম অঙ্গ ফুসফুস, তাই বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই নভেম্বর মাসটিকে ফুসফুসের ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসাবে পালন করা হয়।

শ্বাসতন্ত্রের যাবতীয় রোগের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে মারাত্মক উল্লেখ করে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ফুসফুস ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কারণ অন্যান্য ক্যানসার শনাক্তকরণে যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে ততটা কার্যকর ভূমিকা পালন করে না। তাই আর্লি স্টেজ পার হলে কিংবা ইন্সিডেন্টাল ফাইন্ডিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।

ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ উল্লেখ করে চিকিৎসকরা জানান, গ্রামের চেয়ে শহরে যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া, বায়ুদূষণ, ধুলাবালি সবকিছুই অনেক বেশি। অজৈব পদার্থের ক্ষুদ্র কণা বা আঁশ যেমন- এসবেস্টস, নিকেল, ক্রোমিয়াম এবং জৈব পদার্থ যেমন- বেনজিন, বেনজোপাইরিন ইত্যাদি বায়ুর সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচারই এর জন্য দায়ী। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ রোগীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপায়ী ও তামাকসেবী। এছাড়া ই- সিগারেটেও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ ই- সিগারেটে থাকা অ্যাক্রেলিন নামক একটি বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে যা ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে ধূমপান ও তামক সেবন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এমনকি ধূমপায়ীর নিকটে অবস্থান করা থেকেও বিরত থাকতে বলেন। এছাড়া শিল্প কারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া নির্গমন মাত্রা কমিয়ে আনার তাগিদ দেন। এছাড়া ৫০ বছরের বেশি বয়সী ধূমপায়ী ব্যক্তি, শিল্প কলকারখানায় কাজ করা ব্যক্তিসহ সকলের উচিত একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং করা। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুহার অনেকটাই কমিয়ে আনা যায় উল্লেখ করে চিকিৎসকরা জানান, ফুসফুসের নিরাপত্তা অনেকাংশেই নিজের হাতে।

অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ শামীম। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশসেরা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. পারভিন আখতার বানু , অধ্যাপক ডাক্তার ডা. কাজী মুশতাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. মো. ইউসুফ আলীসহ অন্যান্য সকল বিভাগের সিনিয়র, জুনিয়র চিকিৎসকরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান মো. মেশকাতুল মনোয়ারসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights