বগুড়ায় যমুনার ভাঙনের শিকার দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া:
উজানের পাহাড়ি ঢলে বগুড়ায় বেড়েই চলছে যমুনা নদীর পানি। এতে ভাঙনের শিকার হয়েছে দেড় শতাধিক বাড়িঘর। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা যায়, বগুড়ার তিনটি উপজেলা সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের চলাঞ্চলগুলো নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হয়েছে। ঢলের পানির স্রোতে একটি স্পার বাঁধের প্রায় ২০ মিটার ধসে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, বোহাইল, কাজলা, চন্দনবাইশা, সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও কামালপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২২টি চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝঁকিপূর্ণ কামালপুর ইউনিয়ন ও হাটশেরপুর ইউনিয়ন। বন্যার পানিতে সোনাতলা উপজেলার তেকানী-চুকাইনগর ও পাকুল্ল্যা ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে তেকানিচুকাইনগর, ভিগনেরপাড়া, চরসরলিয়া, খাবুলিয়া, খাটিয়ামারি, রাধাকান্তপুর, আচারেরপাড়া, পূর্বসুজাইতপুর।

সোনাতলা উপজেলার পাকুল্ল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম লতিফুল বারী টিম জানান, পাকুল্ল্যা ইউনিয়নের যে কয়েকটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ওই সব গ্রামের মানুষের শুকনা খাবারসহ চিকিৎসা এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় কোন সমস্যা হবে না।
এদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামে গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টার মধ্যে দেবে গেছে এ গ্রামের একাংশ। এ গ্রামের ইছামারা মোড় থেকে একটি বাঁধ পূর্ব যমুনা নদীর দিকে প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ বাধে গত ২৫ বছর আগে বসতি গড়ে তুলেছিলেন যমুনা নদী ভাঙনের শিকার বেশ কয়েকটি পরিবার। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার দিকে এ বাধে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়। এক ঘন্টার ভাঙনে এ বাঁধটি যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। ফলে এ বাধে বসবাসকারী দেড় শতাধিক এর বেশি বসতবাড়ি সম্পূর্ণ যমুনায় বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে তাদের বসতবাড়িতে ব্যবহৃত সকল ধরনের আসবাবপত্র। উজানের ঢলের পানিতে চরাঞ্চলে অন্তত ২৪ টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চরের উঁচু আশ্রয়স্থলে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান শুরু করেছেন।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জেলা প্রশাসনের ভান্ডারে বিপুল পরিমান ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় বগুড়া জেলা প্রশাসন সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। চিকিৎসা, শুকনা খাবার ও শিশু খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সকলধরণের সেবা প্রদান করা হবে। সরকার এ বিষয়গুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার থেকে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর চলে আসে। এ নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। শুক্রবার দুপুর ১২টায় পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশের বাঙালী নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। এ নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ দশমিক ৪৭ মিটার উঁচুতে বইছে বন্যার পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, যমুনা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিন উপজেলার চরের সব এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া সারিয়াকান্দির কামালপুর ও হাটশেরপুর ইউনিয়ন বর্তমানে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। যেসব স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে সেসব এলাকায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights