বগুড়ায় ৪ মামলায় বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মী আসামি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া
বগুড়ায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশের দায়ের করা চার মামলায় দুই শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার সকালে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির অনেক নেতা গাঁ ঢাকা দিয়ে এলাকা ছেড়েছেন।
মামলা চারটি দায়ের করেছে থানা পুলিশ বাদী হয়ে। চারটি মামলার মধ্যে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া মোড়ে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে ৪৯ জনের নামে, সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৬ জনের নামে, জেলা শহরের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ১১৪ জন এবং জেলার দুপচাঁচিয়া থানায় পদযাত্রা শেষে শাহ ফতেহ আলী পরিবাহন নামের বাস ভাঙচুর ও যাত্রীদের মারপিটের অভিযোগ ২২ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। দুই শতাধিক নেতাকর্মীর নাম ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার পরপরই মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে শহরের সূত্রাপুর রিয়াজ কাজী লেনের বাসা থেকে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও শহরের পুরান বগুড়ার বাসা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েলকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়া দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ৩টায় মাজেদুর রহমান জুয়েলকে পুরান বগুড়ার বাড়ি থেকে এবং রাত সাড়ে ৩টায় শহরের সূত্রাপুরের বাড়ি থেকে আলী আজগর তালুকদার হেনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় ঘোষিত বিএনপি’র ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি গত ১৮ জুলাই সকালে এবং বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ বেলা ১১টায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’র কর্মসূচি ঘোষণা করে। একই দিনে দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বগুড়া শহরে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। শহরজুড়ে পুলিশ সদস্যরা মোড়ে মোড়ে সতর্কতার সাথে প্রহরায় থাকেন। এর মাঝে বেলা সাড়ে ১২ টায় বগুড়ার বনানী থেকে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে পদযাত্রা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে অগ্রসর হয়। পথে ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পৌঁছালে পদযাত্রার পিছনে থাকা নেতাকর্মীরা সরাসরি সাতমাথার দিকে যেতে চান। এতে পুলিশ সদস্যরা শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে বাধা দিলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোঁড়া ছুঁড়ি এবং বিএনপি ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশকিছু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী এবং ১১ পুলিশ সদস্য আহত হয়।
বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন জানান, গত ১৮ জুলাই কর্মসূচির নামে বিএনপি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় সদরে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন নাম প্রকাশ করা হবে না। দুটি বিস্ফোরক আইনে ও একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। তিনটি মামলারই বাদী পুলিশ।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ২২ জনের নাম উল্লেখ করে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের (বাস) চালক বগুড়া সদরের এরুলিয়া বানদিঘীর মোঃ ফেরদৌস মিয়া। এই মামলায় বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন আদমদীঘি উপজেলার দুর্গাপুরের বিএনপি নেতা মো. আবু বক্কর (৪০), একই এলাকার বিএনপি কর্মী মো. তামিম (২৭) ও মো. রাজু (২৮)।
তিনি আরো জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা পদযাত্রা শেষে দুপচাঁচিয়া ফেরার পথে সড়কে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের দুটি বাস থামিয়ে ভাঙচুর ও যাত্রীদের মারপিট করে।
বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় সরাসরি যারা আসামি এবং ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। বগুড়া পৃথক ৪টি মামলায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীর নাম ছাড়াও অজ্ঞাত অসংখ্য হামলাকারীকে আসামি করা হয়েছে।