বরগুনায় ৮৪ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুতে উঠতে হয় গাছের গুড়ি ও কাঠের সিঁড়ি দিয়ে!

মোঃ শাজনুস শরীফ বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলাতে নারিকেল গাছের গুড়ি ও কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গার্ডার সেতুতে। তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নামিশেপাড়া নিদ্রা খালের উপড় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। ৮৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ করার কার্যাদেশ পায় মেসার্স সারা প্রিন্স এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সিডিউল অনুযায়ী ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর ধরে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সেতুটি নিদ্রা খালের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় ওই সেতুটিতে উঠানামা করতে পারছেনা দুই গ্রাম নামিশেপাড়া ও লাউপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থীসহ সহস্রাধিক মানুষ। পারাপারের জন্য স্থাণীয়রা নারিকেল গাছের গুড়ি ও কাঠের সিড়ি দিয়ে সেতুটি পার হচ্ছেন। এতে এলাকাবাসীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, তেমনি সেতু দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করতে না পারায় কোনো কাজেই আসছে না ওই সেতুটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন স্থানীয় ও রাখাইন শিশু শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রাম নামিশেপাড়া ও লাউপাড়া গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। অথচ বাই সাইকেল নিয়েও ওই সেতুতে ওঠা যায় না। সেতুটি সড়ক থেকে অনেক উচ্চতায় নির্মাণ করার কারনে এবং সংযোগ সড়ক না করায় সেতুতে উঠতে ও নামতে উভয় প্রান্তে সিঁড়ির প্রয়োজন হয়।

ভূক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানান, গত এক বছর পূর্বে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত সেতুর উভয় প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। দেয়া হয়নি সেতুর উভয় প্রান্তে সংযোগ সড়কে মাটিও। দুই গ্রামের সহা¯্রাধিক মানুষ ও শিশু শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগবে ওই সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় জনদূর্ভোগ এখন আরো বেড়েছে। সংযোগ সড়ক বিহীন সেতুটি খালের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত মানুষ স্থাণীয়দের দেয়া কাঠের সিঁড়ি ও নারিকেল গাছের গুড়ি বেয়ে সেতুটি পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন।

লাউপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল, মিম, অংচিম, মাতিন বলেন, বৃষ্টির সময় এই সেতুর কাঠের সিঁড়ি ও নারিকেল গাছের গুড়ি খুবই পিচ্ছিল অবস্থায় থাকে। অনেক সময় পা ফসকে অনেক শিক্ষার্থী নিচে পড়ে গিয়ে আহত হয়। তারা দ্রুত সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জোর দাবী জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান, সোহরাব, সফিউল, মোস্তফা কামাল বলেন, কাঠের সিঁড়ি ও নারিকেল গাছের গুড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে নামতে গেলে মনে হয় যেন পাহাড়ে উঠতেছি। তখন আমাদের অনেক ভয় লাগে। এছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ওই সেতু পারাপার হতে গিয়ে অনেক শিশু শিক্ষার্থীরা দূর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে। এভাবে খালের মধ্যে সেতু নির্মাণের পরে এক বছরের উপড় সংযোগ সড়ক না করে ফেলে রাখার কারন খুজে পাই না। দ্রæত সেতুর দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানাই।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সারা প্রিন্স এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে তালতলী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মারুফ রায়হান তপু সেতুটি নির্মাণ কাজ করছেন। তিনি বলেন, অনেক আগেই সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের কাজ বাকি আছে, সেটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মহিবুল ইসলাম বলেন, সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো বাকী থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়া হয়নি। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights