বসুন্ধরা কিংসের ট্রেবল জয়

রাশেদুর রহমান, ময়মনসিংহ থেকে

ম্যাচ শেষের বাঁশিতে ফুঁ দিলেন রেফারি। আগে থেকেই প্রস্তুত বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার, কোচিং স্টাফ ও কর্মকর্তারা। বাঁশি বাজতেই উৎসবে মেতে ওঠেন। কিছু সময় পর পরাজিত, ক্লান্ত-শ্রান্ত মোহামেডানের ফুটবলারদের কাছে গেলেন চ্যাম্পিয়ন কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সান্ত্বনা দিলেন। তারপর উত্তর গ্যালারিতে অবস্থানরত সমর্থকদের কাছে সদলবলে ছুটে গেলেন অস্কার। তাদের অভিবাদনের জবাব দিলেন হাত নেড়ে নেড়ে। এদিকে ট্রফির মঞ্চ সাজিয়ে তোলা হলো। বসুন্ধরা কিংসের সবার গায়ে উঠল ‘ট্রেবল কমপ্লিট’ লেখা সবুজ রঙা জার্সি। উৎসবে-উল্লাসে মেতে উঠল পুরো দল। এবিজি বসুন্ধরা ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো বসুন্ধরা কিংস। ১১ দিনের ব্যবধানে একই মাঠে একই দলকে হারিয়ে দুটি ট্রফি নিশ্চিত করল দলটা। ১১ মে ময়মনসিংহেই মোহামেডানকে হারিয়ে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছিল অস্কার ব্রুজোনের দল। প্রচ- রোদ। গাছের পাতা নড়ার নাম নেই। অসহনীয় গরমে বসে থাকাই দায়। দরদরিয়ে ঘাম ঝরে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে দৌড়ানোর কথা সাধারণ মানুষের কাছে চিন্তা করাও কঠিন। বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডানের ফুটবলাররা ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামের উত্তপ্ত মাঠে জ্যৈষ্ঠের গরম সহ্য করেই খেললেন। রেফারি মাঝে মধ্যেই দিলেন কুলিং ব্রেক। মিনিট খানেক শরীর জুড়িয়েই ফের ফুটবল নিয়ে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধটা হলো সেয়ানে-সেয়ানে।

প্রথমার্র্ধটা এককভাবেই ভালো খেলেছে বসুন্ধরা কিংস। মোহামেডানকে সেখানে কেবল রক্ষণাত্মক হিসেবেই দেখা গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধেই বদলে গেল সাদাকালোরা। প্রচ- আক্রমণে গেল বসুন্ধরার গোলমুখে। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে মাঝ মাঠের একটু সামনে থেকে শাহরিয়ার ইমনের বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের ববুরবেক ও সোহেল রানাকে পাশ কাটিয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের জোরালো শটে বল জালে জড়ান এমানুয়েল সানডে। এগিয়ে যায় মোহামেডান। ৮৬ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল দলটা। ৮৭ মিনিটেই ম্যাজিক্যাল ফুটবল উপহার দেন বসুন্ধরা কিংসের মিগেল ফিগেইরা। নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে ড্রিবলিং করতে শুরু করেন এই ব্রাজিলিয়ান। মিনহাজুর ও মুজাফররভসহ মোহামেডানের পাঁচজন ফুটবলারকে পাশ কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে বাম পায়ের শটে বল জালে জড়ান মিগেল। নির্ধারিত নব্বই মিনিট শেষ হয় ১-১ ব্যবধানে। শুরু হয় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের খেলা। ১০৫ মিনিটে মিগেল কর্নার কিক নেন। মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন বলটা থামান অনেকটা লাফিয়ে। তবে গ্রিপ করতে ব্যর্থ হন তিনি। মাটিতে পড়া বল পেয়ে ডান পায়ের শটে গোল করেন জাহিদ হোসেন। মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়েন বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকরা। তবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে মোহামেডান। তারা গোলটা বাতিলের আবেদন জানায় ফাউলের অজুহাতে। অথচ বারবার রিপ্লে দেখেও ডি বক্সে ফাউল খুঁজে পাওয়া যায়নি। রেফারি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। রেফারির সঙ্গে একপর্যায়ে হাতাহাতিও শুরু করে দেন মোহামেডানের ফুটবলাররা। অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট খেলার প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর মোহামেডান মাঠে নামতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে মোহামেডানের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব মাঠ ছেড়ে গ্যালারিতে এসে ক্লাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তাদের নির্দেশনায় ফুটবলারদের মাঠে পাঠান নকীব। ১৩ মিনিট বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হয়। ম্যাচ শেষে মোহামেডানের কোচ আলফাজও রেফারির সমালোচনা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্যালারিতে দর্শকদের মধ্যেও বেশ উত্তাপ ছড়ায়। এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করে মাইকিং করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফুটবলীয় উত্তেজনায় ঠাসা একটা ফাইনাল দেখল ময়মনসিংহের দর্শকরা।

বসুন্ধরা কিংস অবশেষে ট্রেবল জয় করল। টানা পাঁচবার লিগ জয় করেছে। এর আগে ফেডারেশন কাপ এবং স্বাধীনতা কাপও জয় করেছে। তবে এক মৌসুমে ট্রেবল জয় করা হয়নি দলটার। এবার সেই আক্ষেপটাও দূর করে নিল কিংস। এর আগে বাংলাদেশে শেষবার কোনো দল ট্রেবল জয় করেছে ২০১২-১৩ মৌসুমে। সেবার প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ এবং স্বাধীনতা কাপ জয় করে এক অনন্য নজিরই স্থাপন করেছিল শেখ রাসেল। বাফুফের সহসভাপতি ইমরুল হাসানের কাছ থেকে ফেডারেশন কাপের ট্রফি নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন বললেন, ‘আমরা ট্রেবল জয় করেছি। এটা সত্যিই দারুণ আনন্দের। আমরা প্রতিদিন নিজেদের খেলায় যে উন্নতি করছি, এটা তারই প্রমাণ।’ টুর্নামেন্টে আবাহনী ফেয়ার প্লে ট্রফি পেয়েছে। সেরা খেলোয়াড় কিংসের রবসন রবিনহো, সেরা গোলদাতা আবাহনীর ওয়াশিংটন এবং সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন কিংসের মেহেদি হাসান শ্রাবণ। ফাইনালের সেরা হয়েছেন মিগেল ফিগেইরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights