বিরূপ আবহাওয়ায় লিচুতে ক্ষত-দাগ, শঙ্কায় বাগানিরা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

অনাবৃষ্টি আর চলমান তাপপ্রবাহে অতিরিক্ত গরম ও পশ্চিমা উষ্ণ বাতাসে ঝলসে যাচ্ছে দিনাজপুর অঞ্চলের গাছের পাকা লিচু। লিচুর গায়ে পোড়া দাগ এবং ফেটে যাচ্ছে।

অনাবৃষ্টির কারণে এবার লিচুর আকার ছোট হয়েছে। এ অবস্থায় গাছে রাখতে না পেরে বাজারে নিয়ে কাঙ্খিত দামও পাচ্ছে না বাগানিরা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কেউ কেউ। আবার হঠাৎ কোনদিন লিচুর দাম বাজারে অনেক কমদামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদিও ভাল মানের লিচু এখনও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় রাতে গাছে পানি প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

এদিকে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে সময়ের আগেই লিচু বাজারে নামাতে হয়েছে। এবার লিচুর মৌসুম তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে এমনটাই বললেন লিচু চাষী ও বাগানিরা।
দেশের সেরা রসালো লোভনীয় দিনাজপুরের লিচুর বাগানে দেখা গেছে, প্রখর রোদের কারণে অধিকাংশ লিচুর খোসা পুড়ে গেছে, না হয় ক্ষত হয়েছে। কিংবা শুকিয়ে গেছে। আবার কিছু লিচুর আকৃতি বড় হতেই খোসা ফেটে যাচ্ছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় লিচু চাষি ও বাগানিরা।

দিনাজপুরের লিচু সরবরাহকারী মোসাদ্দেক হোসেন জানান, প্রখর তাপদাহে চাষি ও বাগানিরা গাছে লিচু রাখতে পারছেন না। তাপদাহে লিচু পুড়ে ফেটে যাচ্ছে। এ কারণে সবাই লিচু বাজারে বিক্রির জন্য নামিয়ে ফেলছে। এতে আমদানি বেশি হওয়ায় দাম পড়ে যাচ্ছে। তবে এখনও ভাল মানের লিচুর দাম ভালই আছে।

তিনি জানান, রবিবার মাসিমপুরে বাগানিরা প্রতি হাজার বেদানা লিচুর দাম ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা, বোম্বাই আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, চাই থ্রি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যারা বাগান কিনেছেন তারা পুরো বাগানের লিচু একই দামে বিক্রি করতে পারেননি। কারণ কিছু লিচু প্রখর তাপদাহে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। বর্তমানে দিনাজপুরে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। যেহেতু লিচুর চামড়া খুবই পাতলা, সেহেতু লিচুতে দাগ লেগে লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কাউগা এলাকার জামাল শেখ নামে আগাম বাগান কেনা এক লিচু ব্যবসায়ী জানান, ছয় লাখ টাকার বাগান কেনা রয়েছে তার। বাজারে এবার ভালো দাম থাকায় বেশ লাভের আশা করছিলেন তিনি। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ায় হঠাৎ লিচু নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করায় লাভ তো দূরের কথা আসল টাকা উঠবে কি-না উদ্বিগ্ন তিনি।

উল্লেখ্য, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরে লিচুর বাগান রয়েছে ৫৪৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১১৬৬ হেক্টর, চায়না-থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন। এবার বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লিচুর মৌসুম তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights