বিশ্বজুড়ে ছাত্র আন্দোলন

গাজায় চলমান ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিক্ষোভ চলছে, তা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডাসহ বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। লন্ডন, প্যারিস ও রোম থেকে সিডনি, টোকিও, বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি একটাই- ‘গণহত্যা বন্ধ হোক’। পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভবনের বাইরে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নেয় শত শত শিক্ষার্থী। ফিলিস্তিনের সহমর্মিতায় বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ-কারীদের হটাতে যে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাঁদের প্রতিবাদে শামিলে উৎসাহিত করছে বলে জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন…

বিক্ষোভ দমনে মারমুখী যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষকরাও। নজিরবিহীন এ আন্দোলন ঠেকাতে মারমুখী দেশটির পুলিশ প্রশাসনও। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, ধরপাকড়ের পাশাপাশি করা হচ্ছে বহিষ্কারও। এত কিছুর পরও দমানো যাচ্ছে না আন্দোলনকারীদের। ধীরে ধীরে আরও তীব্র হচ্ছে আন্দোলন। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ক্রমশ।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় ছাত্র আন্দোলন দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বোস্টন, নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন; হার্ভার্ড থেকে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ওহাইও থেকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি একের পর বিশ্ববিদ্যালয় শামিল হচ্ছে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও তোলা হচ্ছে। এ ধরনের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও সফল হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নির্মম দমনপীড়নের চেষ্টা চালায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবাদের অধিকার হরণ, বাকস্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা এবং ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তুলে গেল ১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ এবং মুখোশধারীদের হামলার কারণে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ওপর দমনপীড়ন এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ ভারতেও

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতেও। দেশটির খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ) কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা গাজায় হামলা ও হত্যাযজ্ঞ থামানোর দাবিতে জড়ো হন। ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে তাঁর ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এক বিবৃতিতে জেএনইউ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বলেছে, ইসরায়েলের সন্ত্রাস ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসন ও দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিকে জেএনইউর আঙিনা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। বিক্ষোভ থামাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ১০০ মিটারের মধ্যে সব ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের মধ্যে ভারতীয় বংশো™ূ¢ত এক নারী শিক্ষার্থী গ্রেফতার হন। গ্রেফতার অচিন্থিয়া শিবালিঙ্গম যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। প্রিন্সটন অ্যালামনাই উইকলিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান নেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীরা তাঁবু ফেলেন। সে সময় পুলিশ সেখান থেকে আচিন্থিয়া এবং হাসান সাঈদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী।

অস্ট্রেলিয়ায় তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ

অস্ট্রেলিয়ায় শত শত মানুষ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে বিক্ষোভকারীরা তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন। তাদের হাতে বড় বড় শব্দে লেখা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ প্ল্যাকার্ড। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তন্মধ্যে ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থিদের ১০০ মিটার দূরত্বে ইসরায়েল সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও অবস্থান নিয়েছেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী রাতেও অবস্থান করছেন। গত শুক্রবার সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরোধিতা করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। এতে ক্যাম্পাসে অহেতুক উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডুটন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলপন্থি সমর্থকদের সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি হলে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বেড়ে যায়।

ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ লেবাননের শিক্ষার্থীদের

শত শত ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এ দৃশ্য দেখা গেছে। দেশটির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এ বিশাল বিক্ষোভ মিছিলটি করে। এপ্রিলের শেষ দিক থেকেই দেশটিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ শুরু হয়। শুরুর দিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করার বিষয়টি জোরেশোরে উচ্চারিত হতো। বিক্ষোভকারীরা প্রত্যাশা করেছিলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো উল্টো ইসরায়েলকে নানা ধরনের সামরিক ও অর্থসহায়তা করায় বিক্ষোভকারীরা ফুঁসে উঠেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলে ব্যবসা করে এমন কোম্পানি বয়কট করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি দাবি জানান তাঁরা। গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে লেবাননে গত ৩০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে জড়ো হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির গেটের বাইরে শিক্ষার্থী-জনতা সংহতি সমাবেশ করেন। ১৯ বছর বয়সী আলী আল-মুসলেম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা পুরো বিশ্বকে দেখাতে চাই যে, আমরা ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণা ভুলে যাইনি এবং সচেতন ও সংস্কৃতিবান তরুণ প্রজন্ম এখনো ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে রয়েছে।’


মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিদাদ ন্যাসিওনাল অটোনোমা ডি মেক্সিকোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে কমপক্ষে ৪০টি তাঁবু খাটানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ‘গাজায় সাম্রাজ্যবাদী গণহত্যা’ বন্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বলে জানান। এসব বিক্ষোভে আরবের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইহুদি শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মেক্সিকোর সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ছাত্রদের স্লোগান

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ব্রিটেনের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে ছাত্ররা অবস্থান নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ভবনে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এক্স অ্যাকাউন্ট ‘নিউক্যাসল অ্যাপার্টেড অফ ক্যাম্পাস’-এর একটি ছবিতে দেখা যায়, ‘ফিলিস্তিনি পতাকায় সাজানো কয়েক ডজন তাঁবু টাঙিয়ে ছাত্ররা অবস্থান গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারত্বের অবসান চায়। সে লক্ষ্যে তাঁরা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন একটি জোটও গঠন করেছে। এ ছাড়া লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইক শহরের শিক্ষার্থীরাও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ইলা ওয়ার্ড এনবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘কলাম্বিয়াসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন, তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’ তিনি জানান, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী বুধবার তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নেন। ইলা ওয়ার্ড ‘ইয়ু ডিমান্ড’ নামের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপের সদস্য। তাঁরা দখলদার ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি তুলেছেন।

ফ্রান্সে ছাত্রদের ইসরায়েল বয়কটের ডাক

এপ্রিলের শেষনাগাদ প্যারিসের সায়েন্স পো বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মাধ্যমে ফ্রান্সে আন্দোলন শুরু হয়। সিএনএন-এর ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজায় ‘গণহত্যা’ বন্ধ করার এবং ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় বয়কটের আহ্বান জানিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করেন শিক্ষার্থীরা। ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সায়েন্স পো অন্যতম। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, পুলিশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে তাঁবু থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার ফ্রান্সের দাঙ্গা পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। সে সময় বিক্ষোভকারীদের ‘শেম’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। যদিও পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরানোর কাজটি অহিংসভাবে করেছে। সায়েন্স পোর এক মুখপাত্র জানান, আগের দিন কয়েক ডজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন। এক শিক্ষার্থী জানান, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদে অনশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, ইয়েলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা এ বিক্ষোভ করছেন। ফ্রান্সের আরও অনেক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা একত্রিত হয়েছেন, তারা সবাই ফিলিস্তিনপন্থি। এই ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নেওয়া ২৩টি স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কানাডায় নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বিক্ষোভ

গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়েও। দেশটির মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সংলাপ ব্যর্থ হওয়ায় তা ভেস্তে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের সহায়তার অনুরোধ করে। পাবলিক ব্রডকাস্টার সিবিসি নিউজ অনুসারে, ২৭ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তাঁবু স্থাপনের পর ফিলিস্তিনপন্থি সমর্থকরা এখন পর্যন্ত প্রায় হাজার বর্গমিটার বিশাল এলাকা দখল করে বিক্ষোভ করছে। এই বিক্ষোভ ম্যাকগিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি ডি মন্ট্রিলেও ছড়িয়ে পড়ে। সিবিসি নিউজ অনুসারে, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি কিংস কলেজ সার্কেল নিজেদের ফিলিস্তিনের জন্য ‘পিপলস সার্কেল’ হিসেবে নামকরণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights