বেনজীর পরিবারের ৫০ বিঘা জমি গাজীপুরেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর ঘেঁষে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন। পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পূর্বাচল উপশহরের খুব কাছে হওয়ায় নাগরী ইউনিয়নের জমির মূল্য এখন আকাশছোঁয়া। সুযোগ বুঝে নাগরীতেও সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন আলোচিত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও নামে-বেনামে নাগরীর পাশের চান্দখোলা মৌজার বেতুয়ারটেক গ্রামে কিনেছেন বিঘার পর বিঘা জমি।

কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সম্প্রতি দুদক তল্লাশি চালিয়ে বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী এবং বড় মেয়ের নামে পাঁচটি দলিল পেয়েছে।

সরেজমিন বেতুয়ারটেক গ্রামে গেলে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহীন জানান, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বেনজীর আহমেদ এই এলাকায় জমি কেনা শুরু করেন। ওই সময় এলাকায় জমির বিঘাপ্রতি দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা এবং বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে কেনা হয় এই জমি।
নাগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুইন্নারটেক গ্রামের সুশীল ঘোষ রাজধানীর তাঁতীবাজারে সোনার ব্যবসা করেন। তিনিই প্রথম বেনজীর আহমেদের কাছে জমি বিক্রি করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, চান্দখোলায় বেনজীর পরিবারের ৫০ বিঘার বেশি জমি রয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। এ ছাড়া বেনজীরের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনের নামেও এখানে বহু জমি কেনা হয়েছে। এসব জমির চারদিকে সিমেন্টের খুঁটি পোঁতা আছে।

এলাকাবাসী স্থানটিকে ‘বেনজীরের প্রজেক্ট’ নামে চেনে। সেখানকার রয়েন গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে মোমেন মিয়া (৩২) এসব জমি দেখভাল করেন। জমি কিনেও দিয়েছেন তিনি। একসময় অভাবের সংসার থাকলেও বেনজীরের স্পর্শে এসে মোমেন মিয়া এখন কোটিপতি।

বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে কেনা বিভিন্ন দলিলের মধ্যে পাঁচটি দলিল ঘেঁটে দেখা গেছে, ৫১২/১৭ নম্বর দলিলে কালীগঞ্জের বান্দাখোলা গ্রামের মৃত সুধীর দাসের ছেলে সুদেব দাসের কাছ থেকে চার লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ১৫.৭৫ শতাংশ, ৮৩৬০/১৬ নম্বর দলিলে বেতুয়ারটেক গ্রামের মৃত নরেশ মল্লিকের ছেলে কাশীনাথ মল্লিক, পরেশ মল্লিক ও আশুতোষ মল্লিক ওরফে আশু মল্লিকের কাছ থেকে তিন লাখ ৪৬ হাজার টাকায় ১১.৮৭১ শতাংশ, ২০৩৮/২০১৭ নম্বর দলিলে ছাইতান গ্রামের মৃত সিলভেস্টার রোজারিওর ছেলে প্রদীপ রোজারিও এবং তাঁর মেয়ে তারামনি এসেনের কাছ থেকে আট লাখ ৪২ হাজার টাকায় ২৮.৫৯ শতাংশ, ১৯৭৩/১৭ নম্বর দলিলে পাড়ারটেক গ্রামের মৃত জন লোপেজ টছকানুর ছেলে হেনরি টছকানু, রিচার্ড টছকানু, রায়মন রোনাল্ড টছকানু ও দুই মেয়ে মিসেস রেবেকা কুইয়া ও রিনা টছকানুর (এমিলি) কাছ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৮.১৫ শতাংশ এবং ৯০৯৮/১৭ নম্বর দলিলে পুণ্যেরটেক গ্রামের মৃত হরেন্দ্র চন্দ্র গোপের ছেলে আশুতোষ ঘোষ ও সুশীল ঘোষের কাছ থেকে ১১ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় ৪০.৭৩৯ শতাংশ জমি কেনেন। ওই সময় এসব জমির কেনা দামের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি থাকলেও দলিলে কম মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করেন বেনজীর আহমেদ। এতে রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা এবং বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বেনজীরের নামে মোট ৯টি জোত খুলে জমি নামজারির জমাভাগ করা হয়। এর মধ্যে ২০৭ জোতে ২৮.৫৯ শতাংশ, ২০৮ জোতে ৮.১৫ শতাংশ, ২১৩ জোতে ৪০.৭২ শতাংশ, ২১৫ জোতে ১১.৮৭ শতাংশ, ২২৬ জোতে ৪১ শতাংশ, ২৫০ জোতে ২৫.৫০ শতাংশ, ২৭৬ জোতে ১৪ শতাংশ, ২৭৭ জোতে ৩৫ শতাংশ এবং ২৮৬ জোতে ১৫ শতাংশ জমি নামজারির জমাভাগ হয়েছে। এ ছাড়া বেনজীরের আত্মীয়-স্বজনের নামে পাশাপাশি সময়ে আরো ১৯টি নামজারির জমাভাগ (খারিজ) করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আইজিআর দপ্তরের মাধ্যমে দুদক বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা সম্পদের তথ্য চেয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমরা যে কটি দলিল পেয়েছি, সেগুলো পাঠানো হয়েছে। বিস্তারিত আইজিআর দপ্তর বলতে পারবে।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights