ব্যবসায়ে যেসব কাজ করা নিষিদ্ধ

কে এম ছালেহ আহমদ জাহেরী

সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মনোনীত সর্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনব্যবস্থার নাম হলো ইসলাম। তাই সৃষ্টিজগতের সব ক্ষেত্রেই আছে ইসলামের নির্দিষ্ট নীতিমালা। আয়-উপার্জন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ঘটেনি এর ব্যত্যয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি এই কোরআনে কোনো কিছুই অবর্ণিত রাখিনি…।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৮)

কোরআন ও হাদিসে ব্যবসা সম্পর্কে ইসলামের মৌলিক কিছু নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন—

এক. ধোঁকা-প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি করা

ব্যবসায়ে ধোঁকা-প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি করা নিষিদ্ধ। একদিন রাসুল (সা.) একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি খাদ্যের ভেতরে হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন, খাদ্যগুলো ভেজা বা নিম্নমানের। রাসুল (সা.) বলেন, হে পণ্যের মালিক। এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল। এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি এগুলো খাবারের স্তূপের ওপর রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখতে পেত। যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০২)

দুই. ওজনে কম-বেশি করা

ওজনে কম-বেশি করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)

রাসুল (সা.) বলেন, যখন কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ওজনে বা মাপে কম দেয়, তখন শাস্তিস্বরূপ তাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ৭৮৫)

তিন. পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা শপথ করা

পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা শপথ করা নিষিদ্ধ। মিথ্যা ধ্বংস করে মানবতাবোধ, ঘটায় নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। তার ওপর রয়েছে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ। রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তিন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো, যে তার ব্যাবসায়িক পণ্যকে মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে। (মুসলিম, হাদিস : ১০৬)

চার. ব্যবসায়ের সঙ্গে সুদ মেশানো

ব্যবসায়ের সঙ্গে সুদ মেশানোও ব্যবসায়ীর জন্য হারাম। কবিরা গুনাহর মধ্যে একটি হলো সুদ। এর পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা তার মতো (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে তারা বলে, বেচাকেনা সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ বেচাকেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭৫)

তাই ব্যবসায়ীর জন্য উচিত, তার ব্যবসায়ের মতো পবিত্র জিনিসে যাতে সুদের অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

পাঁচ. ব্যবসায়ে মোজাবানা করা

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মোজাবানা থেকে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ বাগানে যদি খেজুরগাছ থাকে, তার কাঁচা খেজুর পরিমাপকৃত খুরমার বিনিময়ে বেচাকেনা করা। আর যদি আঙুর থাকে, তা পরিমাপকৃত কিশমিশের বিনিময়ে কেনাবেচা করা। আর যদি তা ক্ষেতের ফসল হয়, তা পরিমাপকৃত গমের বিনিময়ে কেনা—এসব থেকে তিনি নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৩৭৫৫)

ছয়. জটিল মারপ্যাঁচে অন্যের মাল হরণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে এটাও জঘন্য অপরাধ।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ। (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)

সাত. ব্যবসায়ে নিজে ঠকা যাবে না এবং অন্যকেও ঠকানো যাবে না

এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে অভিযোগ করল, সে বেচাকেনায় প্রতারিত হয় বা ঠকে। রাসুল (সা.) বলেন, যখন তুমি বেচাকেনা করবে, তখন বলে দেবে যে কোনো প্রতারণা বা ঠকানোর দায়িত্ব আমি নেব না। তোমার জন্য তিন দিন পর্যন্ত পণ্য ফেরত দেওয়ার অধিকার আছে। (বুখারি, হাদিস : ৬৯৬৪)

লেখক : খতিব, আবারপাড়া জামে মসজিদ ও ঈদগাহ, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights