ভবনটি নিয়ে লিখে সতর্ক করেছি, কিন্তু কেউ কথা শোনেনি

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর বেইলি রোডের যে ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সেটি তৈরি করা হয়েছিল অফিসের জন্য। অথচ ভবনটি ব্যবহার করা হয়েছে রেস্তোরাঁ হিসেবে। এর কোনো অনুমোদন ছিল না।

গণমাধ্যমকে ভবনটির স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় হওয়ায় স্থপতি হিসেবে তিনি রিপোর্ট ও এজ বিল্ট ড্রয়িং দেওয়া থেকে বিরত থেকে জমির মালিক, ডেভেলপারকে বারবার লিখিতভাবে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তার কথা কেউ শোনেনি।
মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, ‘সাত-আট বছর আগে ভবনটির নকশা করেছিলাম অফিসের জন্য। অনুমোদনও হয় বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে। কিন্তু এর ব্যবহার শুরু হয় রেস্তোরাঁ হিসেবে।

নিয়ম হলো, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়ার পর ভবন ব্যবহার করবে। কিন্তু মালিকপক্ষ সেটি নেয়নি।’ তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। দেখা যায়, অনেক মালিকপক্ষই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়া ভবন ব্যবহার করে।

কারণ রেস্তোরাঁয় ভাড়া বেশি পাওয়া যায়, তাড়াতাড়ি ভাড়া হয়, যা অর্থলোভ ছাড়া কিছু নয়। মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে স্বার্থ হাসিল করা কোনো সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না। ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ, একটি জুস বার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠায় থাকতেন বলেও জানান স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ।

তিনি বলেন, ‘এমন ভবনে একটি থেকে দু’টি রেস্তোরাঁ থাকতে পারে, কিন্তু চার-পাঁচ গুণ করতে পারে না।

এর তো অন্তত একটা নীতিমালা থাকা দরকার! কিন্তু সেটি কি আমাদের আছে? সাধারণত আগুন লাগে দুটি উৎস থেকে। একটি হলো শর্ট সার্কিট, অন্যটা কিচেন বা চুলা থেকে। এখানে যতগুলো রেস্টুরেন্ট ততগুলো চুলা ছিল তা নয়। একটি রেস্তোরাঁয় আট থেকে ১০টি চুলা থাকে এবং সেটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চুলা। সুতরাং চুলা যেখানে যত বেশি, সেখানে আগুন লাগার আশঙ্কা তত বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, “গুগলে যদি সার্চ দেওয়া হয় ‘রেস্টুরেন্ট অ্যারাউন্ড সাতমসজিদ রোড’-এত রেস্তোরাঁ যে লেখা পড়ে শেষ করা যাবে না। আমার জানা মতে হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট সেখানে। ঢাকা শহরে এ রকম রেস্টুরেন্ট কালচার গড়ে উঠলেও এর কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। এ রকম যদি একই ভবনে অনেক রেস্তোরাঁ থাকে, তবে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।”

মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, ডেভেলপারকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসে, তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কী করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কী করা! তাদের এ-ও জানানো হয় যে সঠিক ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গত মাসে অত্র এলাকার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশন মাস্টারকে এক বার্তায় এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ঠ ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সাবেক ডিজিকেও তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি তার সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশন মাস্টার সাহেবকে বিস্তারিত তথ্যসমেত লিখলাম। দেখা যাক কী হয়।’

স্থপতি বলেন, ‘প্রতিবার যখন আগুনের ঘটনা ঘটে, কমিটি হয়। কিন্তু এরপর আর কিছু হয় না। আমি মনে করি, নীতিমালা ও তদারকি জরুরি, যেভাবে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে করা হয়েছে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষকে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া যায়।’

উল্লেখ্য, দেশের অগ্রগণ্য স্থপতি, চিত্রশিল্পী ও সংগীতশিল্পী মুস্তাফা খালিদ পলাশ ডেলভিসটা ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ভিসতারা আর্কিটেক্টসের প্রধান স্থপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই সঙ্গে তিনি স্থাপত্যবিষয়ক পত্রিকা ‘ডট’-এর সম্পাদক। দেশের অসংখ্য নান্দনিক ভবন তৈরি হয়েছে তার হাত ধরে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বসুন্ধরা সিটি, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, ওয়েস্টিন হোটেল, ইউনিক ট্রেড সেন্টার, জিপি হাউস, মোবিল হাউস, বাংলালিংক হেডকোয়ার্টার, রবি হেডকোয়ার্টার, ল্যাবএইড হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের র‌্যাডিসন হোটেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights