ভারত থেকে আমদানির খবরে পাবনায় পিঁয়াজের দরপতন

পাবনা প্রতিনিধি

দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় পিঁয়াজ আমদানির ঘোষণার পরই পাবনার বাজারে প্রভাব পড়েছে। পাবনার হাট-বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে পিঁয়াজের দাম। যে পিঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আমদানির একদিন পর মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।

জানা গেছে, বন্দর এলাকা হিলি, ভোমড়া, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে পড়েছে ভারত থেকে আমদানিকৃত পিঁয়াজ। তবে এখনো পাবনার বাজারগুলোতে না আসলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের পিঁয়াজ ঢোকার খবরে পিঁয়াজ ভান্ডার খ্যাত জেলা পাবনায় আরেক দফায় কমেছে পিঁয়াজের দাম। দাম আরও কমার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন চাষিরা। পাবনার বেশকিছু পিঁয়াজ হাট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন একটু একটু করে কমছে পিঁয়াজের দাম। তবে ভারত থেকে আসা পিঁয়াজের খবরে বড় দরপতন ঘটেছে হাটগুলোয়। এতে চাষিরাও হাটে পিঁয়াজ কম আনতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ বিক্রি করতে এনেও ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার পাবনার বড় পিঁয়াজের হাট হাজিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোরে গাড়ি এবং বস্তা মাথায় করে পিঁয়াজ নিয়ে হাটে আসছেন চাষিরা। দেশী ভালো পিঁয়াজ প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫শ টাকায়। যার প্রতি কেজি দর দাঁড়ায় ৬০ থেকে সাড়ে ৬২ টাকা। অন্যদিকে এ পিঁয়াজ প্রতি মণ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৭ থেকে ২৮শ টাকায়। যার প্রতি কেজি দর দাঁড়ায় সাড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত হাটেও (২-৩ দিন আগে) পিঁয়াজের প্রতি মণ দাম ছিল ৩ হাজার ৪শ থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা। সে হিসেবে ২-৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ পিঁয়াজে প্রায় ৭ থেকে ৮শ টাকা দাম কমেছে। এ দরপতনে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি মিললেও লোকসানজনিত দুশ্চিন্তার কারণ হবে চাষিদের জন্য।

সদর উপজেলার চর বলরামপুরের পিঁয়াজ চাষি আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, সকালে হাজির হাটে পিঁয়াজ এনেছিলাম। ভারতের পিঁয়াজ দেশে ঢোকার খবরে পিঁয়াজের দাম অনেক কম। দাম যদি আরও কমে তবে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অন্যদিকে পিঁয়াজ বেশি দিন ঘরে রাখার সুযোগও নেই, পচন ধরে নষ্ট হয়। দুদিক থেকেই আমরা বিপদগ্রস্ত। আমাদের লোকসান যেনো না হয়, সরকার যদি পিঁয়াজের এমন একটা নির্দিষ্ট দাম বেধে দেয়, তবে সবার জন্যই ভালো।

গয়েশপুর এলাকার চাষি করিম উদ্দিন বলেন, মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পিঁয়াজ ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আকারে বড় ও ভালো মানের কিছু পিঁয়াজ ১২০০ টাকা মণ ছিল। তবে মূলকাটা বা মুড়িকাটা পিঁয়াজ চাষে কিছুটা লাভবান হয়েছেন চাষিরা।

তিনি আরও জানান, সার, বীজ, চাষের খরচ, শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিঁয়াজ চাষ করে লাভবান হতে পারছেন না তারা। এক বস্তা পিঁয়াজ মাঠ থেকে বাড়ি নিতেও ৭০ টাকা ব্যয় হয়।

প্রতি মণ পিঁয়াজ কাটতে নারী শ্রমিকদের দিতে হয় ৩০/৪০ টাকা। এরপর হাটে নিতে খরচ হয় আরও ২০ টাকা। সে হিসেবে উৎপাদনের পরও প্রতি মণ পিঁয়াজে ১০০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। সেখানে মৌসুমের সময় যদি দুই হাজার টাকা করে মণ পাওয়া যেত, তাহলে কিছুটা লাভবান হতেন চাষি।

সরকার যেহেতু পিঁয়াজ আমদানি শুরু করছেন, সেখানে আমাদের কিছুই বলার নেই, তবে দাম সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়ার দাবির পাশাপাশি চাষের উপকরণের দাম কামানোর দাবি জানান তিনি।

এদিকে পিঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমার বিষয়টিকে মাথায় রেখে খুচরা ক্রেতারা পিঁয়াজ ক্রয় করছেন কম। তাদের ধারণা দাম হয়তো আরও কমবে এবং তখন বেশি করে কেনা যাবে। এতে কিছুটা সাশ্রয় হবে।

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী আরমান মালিথার সাথে কথা হয় পাবনার হাজির হাটে। তিনি জানান, মাসিক বাজার করতে এসেছেন, কিনবেন পিঁয়াজও। পিঁয়াজ-রসুনসহ মসলাজাতীয় পণ্যগুলো মাসিক হিসেবে কেনা হয়। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় কম কম কিনেই চলতে হচ্ছিল। আজ দেখছি দাম কিছুটা কমেছে। আরও দাম কমবে জন্য বেশি নিচ্ছি না। ভাবছি আরেকটু কমলে একেবারে ঈদের বাজার শেষ করব।

পিঁয়াজ ব্যবসায়ী আতাহার জানান, আমরা যেমন কিনি তেমন বিক্রি করি। তবে দাম যদি নির্ধারিত হতো, তবে কেনা ও বেচা উভয়ই সহজ হতো। যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে আমদানিকৃত পিঁয়াজ শেষ হলে দাম আবার কয়েকগুণ বাড়বে। সেই দাম ক্রেতাদের জন্য অতিরিক্ত বেশি হয়ে যাবে।

অন্যদিকে পিঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল যেন না হয় সে বিষয়ে মনিটরিং করছে পাবনা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। হাট-বাজারের দোকানগুলোতে নিয়মিত মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনাসহ কোনো কারসাজিতে না জড়ানোর নির্দেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাবনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান রনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights