ভারত সিরিজ শেষে অবসরে যাচ্ছেন এলগার

অনলাইন ডেস্ক

নতুন মৌসুমের শুরুতেই ক্যারিয়ার শেষের বার্তা জানিয়ে দিলেন ডিন এলগার। ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর যাবেন ৩৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরিয়নে আগামী মঙ্গলবার বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে তার শেষের শুরু। পথচলা একেবারে থেমে যাবে নিউ ইয়ার টেস্টে কেপ টাউনে।

সাম্প্রতিক সময়ে এলগার নিজের সেরা চেহারায় নেই। সবশেষ ১৬ ইনিংসে তার ফিফটি কেবল একটি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বাস্তবতায় ওপেনিংয়ে তার বিকল্পও খুব বেশি নেই। তবে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট কোচ শুক্রি কনরাডের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় নেই এলগার। আগামী বছর এসেক্সের হয়ে কাউন্টি খেলতেও দেখা যেতে পারে এই ব্যাটসম্যানকে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় না থাকলেও এই মৌসুমে তাকে হয়তো বেশ ভালোভাবেই দরকার ছিল দলের। বিশেষ করে, ভারতের বিপক্ষে সিরিজের পর নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজের সময়। এসএ টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের কারণে ওই সফরে মূল দলের বেশ কজনকে পাবে না দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে এলগারের অভিজ্ঞতা দরকার হতে পারত দলের। নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাও সেই সফরে থাকবেন না বলে এলগারকে অধিনায়কত্ব করার অনুরোধও করা হতো হয়তো।
কিন্তু নিজেকে সেই পর্যন্ত টেনে নিলেন না তিনি। বিদায়ের ঘোষণা দেওয়া বিবৃতিতে এই বাঁহাতি ওপেনার বলেন, প্রিয় আঙিনায় শেষ করতে পেরে তিনি আপ্লুত। এলগার বলেন, ক্রিকেট নামক খেলাটা খেলতে পারা ছিল আমার স্বপ্ন, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল সর্বোচ্চ। ১২ বছর ধরে এটা করতে পারা আমার সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না। অবিশ্বাস্য এই পথচলায় ছুটতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। কেপ টাউন টেস্টই হবে আবার শেষ। গোটা বিশ্বে আমার সবচেয়ে প্রিয় স্টেডিয়াম এটি। এখানেই প্রথম টেস্ট রান করেছিলাম এবং আশা করছি, শেষ রানও করব।

প্রথম রান কেপ টাউনে করলেও তার অভিষেক পার্থে। ২০১২ সালের নভেম্বরে সেই টেস্টে ‘পেয়ার’ পান তিনি। দুই ইনিংসেই শূন্য রানে ফেরেন মিচেল জনসনের বলে। পরে দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রানের দেখা পেলেও আউট হন ২১ রানে। পরের টেস্টেই অবশ্য দেখা পান সেঞ্চুরির।

শতরানটি করেছিলেন সাত নম্বরে খেলে। তখন তিনি ছয়-সাতেই খেলানো হতো দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলে। ওপেন করার সুযোগ পান অষ্টম টেস্টে। প্রথমবার ওপেন করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ১০ বছরে তিনিই ছিলেন ওপেনিংয়ে দলের বড় ভরসা।

এখনও পর্যন্ত ৮৪ টেস্ট খেলে ১৩ সেঞ্চুরিতে তার রান ৫ হাজার ১৪৬, ব্যাটিং গড় ৩৭.২৮। ওপেনিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান (৪৯২০) ও সেঞ্চুরি (১২) তার। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের উপযোগী তাকে কখনই সেভাবে মনে করা হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৮ ওয়ানডে খেলে ফিফটি করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাননি।

২০১৭ সালে টেস্টে তিনি প্রথমবার নেতৃত্ব দেওয়ার স্বাদ পান তখনকার অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি ছুটিতে থাকায়। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ২০১৯ সালেও দুটি টেস্টে নেতৃত্ব দেন। পরে ২০২১ সালে তাকে নিয়মিত টেস্ট অধিনায়ক করা হয়। তার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজ জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা, দেশের মাঠে হারায় ভারতকে, সিরিজ ড্র করে নিউ জিল্যান্ডে।

তবে তার নিজের ব্যাটিং ফর্ম পড়তে থাকে এই সময়ে। অধিনায়কত্বের ১৭ টেস্টে তার কোনো সেঞ্চুরি নেই। ব্যাটিং গড় ২৬.৮৭। এই ১৭ টেস্টে দল জিতেছে ৯টিতে, হেরেছে ৭টিতে। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং স্টাফে রদবদলের সময় টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকেও এলগারকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাভুমাকে।

সেই সিদ্ধান্তে সিদ্ধান্তে এলগার অসন্তুষ্ট ছিলেন বলেই শোনা যায় তখন। ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি ভাবছেন বলেও জানা গিয়েছিল তখন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মার্চে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এবার সবকিছুর ইতি টেনেই দিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights