মাকে হত্যার দেড়মাস আগে পাঁচ বছরের মেয়েকেও হত্যা করে
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
রংপুরের পীরগঞ্জে যাত্রাপালার নৃত্য শিল্পী দেলোয়ারা বেগম ঝিনুককে (৩৬) হত্যার দেড় মাস আগে তার ৫ বছরের শিশু কন্যা সাইমাকেও হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখে কথিত স্বামী আতিকুর রহমান (৩৫)।
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার সকালে পীরগঞ্জ থানার পুলিশ উপজেলার বড় বদনারপাড়া গ্রামে ঘাতকের বাড়ির পিছন থেকে অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ হাজারো উৎসুক জনতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ঝিনুকের দ্বি-খন্ডিত লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। এদিকে এই পৈচাসিক ঘটনায় উত্তেজিত জনতা ঘাতক আতিকুরের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ঘাতক আতিকুরের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে।
জানা গেছে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দিলালপুর গ্রামের রেজাউল করিম তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম ঝিনুককে প্রায় তিন বছর আগে তালাক দেন। তারপর থেকেই ঝিনুক যাত্রাগানের ভাসমান শিল্পী হিসেবে জীবনযাপন করে আসছিলেন। সাথে তার ৫ বছরের শিশু কন্যা সাইমাও থাকতো। এদিকে পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের বড় বদনাপাড়ার জুয়াড়ী আতিকুর রহমান (৩৫) ঝিনুককে মাঝে মধ্যে যাত্রাগানের শিল্পী হিসেবে ভাড়া করে আনতেন। পাশাপাশি তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবেও পরিচয় দিলেও তাদের সম্পর্ক বৈধ ছিল না। তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় মা ও মেয়েকে হত্যা করে আতিকুর।
একপর্যায়ে শুক্রবার সকালে ঝিনুকের মাথাবিহীন লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় লাশের একটু দূরে কাপড় ভর্তি একটি ব্যাগে (লাগেজ) মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ, সিম উদ্ধার করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে বড় বদনারপাড়ার আতিকুর রহমানের গতিবিধির উপর নজর রাখে পুলিশ। শনিবার সকালে আতিকুর বোরখা পড়ে পালানোর সময় পুলিশ তাকে কাবিলপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে।
আতিকুরের দেয়া তথ্যেই শনিবার বিকেলে ঝিনুকের কেটে নেয়া মাথাটি করতোয়া নদীপাড়ের টোংরারদহ নামকস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। এ খবরটি প্রকাশ হলে ঝিনুকের সাবেক স্বামী রেজাউল করিম মোবাইলে পীরগঞ্জ থানার ওসিকে বলেন, তার মেয়ে সাইমা ঝিনুকের সাথে থাকতো, সে কোথায় আছে জানি না। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুলিশ ঘাতক আতিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তাকেও হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন। তার দেয়া তথ্যেই রবিবার সকালে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় এসআই অনন্ত কুমার বর্মন বাদী হয়ে আতিকুরকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি এমএ ফারুক বলেন, ঝিনুকের সাবেক স্বামী রেজাউল আমাদের কাছে তার শিশু কন্যা সাইমার খোঁজ জানতে চাইলে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে শিশুটিরও লাশ পাই। দুটি হত্যাকান্ডের রহস্য ও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে তদন্ত চলছে। আতিকুরকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ময়নাতদন্তের পর স্বজনরা ঝিনুকের লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশের উদ্যোগে শনিবার রাতে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।