মৌলভীবাজারে বন্যায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

ভারতের উজানে বৃষ্টিপাত না থাকায় মৌলভীবাজারের সবকটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। টানা পাঁচদিনের বন্যার জেলার প্রায় সাড়ে তিনলাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে মনু ও ধলাই নদীর ভেঙে যাওয়া দুটি স্থানের বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে মনু ও ধলাই নদী পাড়ে বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেলো দুদিনে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ উঁচু স্থানের পানি সরে গেছে। এতে অনেকের বাড়ি ঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। দেখা গেলো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনেরা বাড়িঘরে ফিরছেন। অনেকে আবার বন্যায় ধসে পড়া ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ করছেন। সেই সঙ্গে ঘরের ভিতর আটকে থাকা কাদা পানি সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাইজপাড়া এলাকার দিনমজুর রিপন বলেন, তৃতীয় দফা বন্যায় তাদের এলাকায় ৮ থেকে ৯ ফুট পানি উঠেছে। ঘরের চালের সঙ্গে নদীর পানি ছিল। গেলো দুদিনে এসব পানি সরে গেছে। এখন তারা বাড়ি ঘরে ফিরছেন।
রাজনগরের টেংরা ইউনিয়নের রাফি জানান, এরকম বন্যা আমার জন্মের পর দেখিনি। একসাথে এতো পানির ঢল নেমে ঘর অর্ধেক ডুবে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানালেন, দফায় দফায় বন্যায় তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কারো ঘর দরজা ভেঙে গেছে। আবার কারো ঘর ধসে গেছে। একই অবস্থা জেলায় প্রতিটি বন্যা দুর্গত এলাকায়। মনু পাড়ের বন্যা দুর্গত লোকজনেরা চরম বেকায়দায় পড়ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টিপাত কমে আসায় মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রæততার সঙ্গে নামছে। এতে বন্যার উন্নতি হচ্ছে। তবে এ রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলার নিন্মাঞ্চলের বাড়ি ঘরে এখনও পানি।
পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র জানায়, সোমবার বিকাল ৩টায় মনু নদী কুলাউড়া মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ২৯৫ সেন্টিমিটার ও শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধলাই নদী কমলগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজের কাছে ৩৩৮ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদী শেরপুর ব্রিজের কাছে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে জুড়ি নদীর পানি, ভাবনীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, সাত উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৩ জন। ১০২ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ হাজার ৯১৭ জন লোক আশ্রয়ে রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় আর্থিক বরাদ্দ রয়েছে নগদ ৪৫ লাখ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চাল বরাদ্দ আছে এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। বিতরণ করা হয়েছে ৮২৬ মেট্রিক টন চাল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ইতোমধ্যে মনু নদী কুলাউড়া আশ্রয়ণ ও কমলগঞ্জের ধলাই নদী ঘোড়ামারা ভাঙন এলাকায় বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে। এ দুটো বাঁধ মেরামতের পর অন্য ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights