যুক্ত করবে তিন জেলা চাঁদপুর লক্ষ্মীপুর ভোলা; দেশের প্রথম ঝুলন্ত সেতু হচ্ছে মেঘনা-ধনাগোদায়

ভারতের রাজিব গান্ধী সমুদ্র সেতু, চীনের সুটং ইয়াংজি নদী সেতু, ফ্রান্সের মিলাউ ভায়াডাক্ট, কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো-ওকল্যান্ড বে ব্রিজের মতো বাংলাদেশেও কেবল স্টেড বা ঝুলন্ত (তারের) সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। বড় ধরনের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত ঝুলন্ত সেতুটি হবে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর। মতলব উত্তর-গজারিয়া সড়কে এই সেতু নির্মাণ হলে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ভোলা এই তিন জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।

পরিকল্পনা কমিশনে গত ৭ সেপ্টেম্বর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আলোচ্য প্রকল্পটির প্রস্তাব তুলে ধরেন সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) রহিমা আক্তার। সেখানে তিনি বলেন, এটি একটি ‘কেবল স্টেড সেতু’- যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। এর বেশির ভাগ ৩ হাজার ১০২ কোটি টাকা দেবে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির এক্সিম ব্যাংক এবং ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড থেকে প্রকল্প ঋণ হিসেবে এ অর্থ নেওয়া হবে। বাকি ৬৬০ কোটি টাকা সরকারি অনুদান হিসেবে নেওয়া হবে। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে মতলব উত্তর উপজেলা ও গজারিয়া উপজেলার মধ্যে নৌপথে ইঞ্জিন বোট ব্যতীত বিকল্প কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। যাতায়াতের জন্য এ ব্যবস্থা খুবই অপর্যাপ্ত, সময়সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। উপরন্তু চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর এবং ভোলার উপকূলীয় এলাকা হতে কাজের সন্ধানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্পনগরীতে যাতায়াত করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণ হলে ওই তিন জেলার মানুষ সহজে এবং স্বল্প সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাওয়া-আসা করতে পারবেন। এ ছাড়া সেতুটির মাধ্যমে গজারিয়া ও ভবেরচর হয়ে চাঁদপুর ও ঢাকার মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের বিকল্প পথ তৈরি হবে। বর্তমানে চাঁদপুর থেকে ভবেরচর পর্যন্ত বিদ্যমান সরু এবং আঁকাবাঁকা পথের দূরত্ব ৫২ কি.মি.। প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মিত হলে বর্ণিত পথের দূরত্ব হবে ৩৫.৬ কি.মি.। এতে ১৬.৪ কি.মি. ভ্রমণ দূরত্ব হ্রাস পাবে। এর ফলে প্রতিদিন চাঁদপুর থেকে ঢাকায় যাতায়াতের মাধ্যমে যাত্রীরা বিভিন্ন অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ অন্যান্য কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ফলে আবাসন এর ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে।

কেবল স্টেড বা ঝুলন্ত সেতু কী : সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র স্রোত বা প্রচ- ঢেউ, খাড়া উপত্যকায় যেখানে স্পেন বসাতে সমস্যা হয়- সেখানে এ ধরনের কেবল স্টেড সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই পাশে কেন্দ্রীয় টাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত কেবল বা তার মূল সেতুর ডেকের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করা হয়- যা পুরো সেতুর ভারসাম্য রক্ষা করে। এই তারগুলো সেতুতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে এবং সেতুর কাঠামো জুড়ে সমানভাবে ওজন বিতরণ করতে সহায়তা করে। হাইওয়ে রোডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য দেশে বড় কোনো নদীতে এ ধরনের ঝুলন্ত সেতু এর আগে নির্মাণ হয়নি। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই শহরের পশ্চিম শহরতলি ও বান্দ্রা অঞ্চলের সঙ্গে মুম্বাইয়ের ওরলি অঞ্চলের সংযোগরক্ষাকারী সেতুটি একটি কেবল-স্টেইড সেতু। এ ছাড়া চীন, ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের সেতু রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights