রাবির ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকির অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবাব আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের নেতা তাসকিফ আল তৌহিদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের নিকট একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী।

এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছি। পরবর্তীতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য কথা বলেছি। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী তার নিজ কক্ষেই থাকবে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন তাসকিফ আল তৌহিদ। তিনি হলের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। আরবী বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ভুক্তভোগী মফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি নবাব আব্দুল লতিফ হলের ১০৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, সোমবার বিকেলে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের নিকট যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ নেতা তৌফিকের সঙ্গে দেখা হয়। তখন আমি কোথায় যাচ্ছি তিনি জিজ্ঞেস করেন এবং রিপোর্টটা হাতে নেন। তারপর আমার বাবার পেশা জানতে চাইলে বলি, বাবা রিক্সা চালক। তখন তিনি বলেন, ‘বাবা রিক্সা চালক অথচ তুই এতো টাকা দিয়ে ডক্টর দেখাস কি করে’। এমনকি বাবাকে হেয় করে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। তখন আমি জানাই, আমি একটি সামাজিক সংগঠন থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে চিকিৎসা করছি। এটা সোনার পর তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, ‘তুই রান্না করে দশ জনকে খাওয়াবি’। এসময় আমি প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, অমুক (কারো নাম উল্লেখ না করে) নাকি তোর কাছে তিন হাজার টাকা পায়। আমি উত্তর জানাই, আমার কাছে কেউ টাকা পায় না। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে তৌহিদসহ তার কয়েকজন অনুসারী মিলে আমাকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায় এবং পিঠে একটি আঘাত করে গালিগালাজ করেন ও হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেন।

অভিযোগ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগ নেতা তাসকিফ আল তৌহিদ বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছর তৌহিদের বিরুদ্ধে হল শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তাকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক প্রতিবাদ জানালে হলের গৃহশিক্ষক ড. হামিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি বলে জানান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। এছাড়া তার বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়াশোনা শেষ।

পড়াশোনা শেষ ও বহিষ্কার হওয়ার পরেও ছাত্রলীগ নেতার হলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু তাকে দায়িত্ব দেয়ায় সে হলে থাকছেন। অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থার কথা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান প্রাধ্যক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে আবাসিক হলগুলোতে সিট দখল, মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সিট ছাড়ার হুমকি ও কক্ষ ঘুরে ঘুরে সিট জরিপ করছে নেতাকর্মীরা। তাদের চাপে সিট ছেড়ে অনেকে চলে যাতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, কোন শিক্ষার্থীকে সিট ছেড়ে যেতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলতে পারে না। এমন অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights