শিলং তীরে বিদ্ধ সিলেট
শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট
জুয়ার আসর বসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে। জুয়ার নাম ‘শিলং তীর’। জুয়ার সেই তীরে বিদ্ধ হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সিলেটের নানা পেশা ও শ্রেণির মানুষ। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সিলেটে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এ জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা। ভারতের জুয়াড়িরা সিলেটে এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করেন টিকিট। টিকিট (নম্বর) কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। জুয়ার টিকিট কিনতে সারা দিনের পরিশ্রমের টাকা তুলে দিচ্ছেন দালালদের হাতে।
গত এক সপ্তাহে সিলেট নগরীতে অভিযান চালিয়ে ‘শিলং তীর’ জুয়া সিন্ডিকেটের ১১ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। তবে প্রচলিত আইনে জুয়ার শাস্তি কম হওয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ে ‘শিলং তীর’ নামক জুয়া সেখানকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মূলত শিলং তীর নামক জুয়ার আয়োজকরা গ্রাহকদের কাছে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বর বিক্রি করেন। এর মধ্য থেকে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। বিজয়ী নম্বর এজেন্টরা জানিয়ে দেন টিকিট (নম্বর) সংগ্রহকারীদের। যিনি বিজয়ী হন তিনি যত টাকা দিয়ে টিকিট কেনেন তার ৭০ গুণ বেশি টাকা পেয়ে থাকেন। গত প্রায় এক দশক আগে এজেন্টের মাধ্যমে এই জুয়া খেলা চালু হয় সিলেটে। ‘একে-সত্তর’ এই লোভে পড়ে সিলেটের নানা পেশা ও বয়সি মানুষ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। শুরুতে এই খেলা সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এক পর্যায়ে গোটা সিলেটে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আসক্তি বাড়ে এই জুয়ায়। ‘শিলং তীর’ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সিলেটে সচেতন সমাজ থেকে দাবি ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জুয়াড়ি ও এজেন্টের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করায় গত কয়েক বছর এ জুয়া প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। কিন্তু সম্প্রতি আবারও প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। পুলিশও অ্যাকশনে নেমেছে।
সিলেট নগরীতে গত এক সপ্তাহে তিনটি অভিযান চালিয়ে ‘শিলং তীর’ জুয়ার ১১ জন এজেন্টকে আটক করার পাশাপাশি উদ্ধার করেছে জুয়ার টিকিট নম্বর ও হিসাব রাখার সরঞ্জামাদি এবং নগদ টাকা। গত সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নগরীর কালীঘাটে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করা হয়। এর আগে ২৫ জানুয়ারি বিকাল সোয়া ৪টায় নগরীর পশ্চিম কাজলশাহ এলাকা থেকে তিনজন এবং ২১ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় দক্ষিণ সুরমার মারকাজ পয়েন্টের কাছ থেকে দুজনকে আটক করা হয়। এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ‘এই জুয়া মোবাইলে খেলা হয়, তাই হাতেনাতে ধরতে হয়। এজন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়। জুয়ার এজেন্টদের আস্তানায় অভিযান করতে পারলে কিছু প্রমাণপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু প্রচলিত আইনে জুয়ার শাস্তি কম হওয়ায় এরা সহজে পার পেয়ে যায়।’