শিশুদের গায়ে হাত তোলা যাবে না, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিল

অনলাইন ডেস্ক

শিশুদের মারধরের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের শিশু চিকিৎসকরা। বর্তমানে যুক্তিসংগত কারণে শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া আইনগতভাবে বৈধ। কিন্তু চিকিৎসকেরা সেটিও চান না। তাই বর্তমান আইন সংশোধনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

বর্তমানে ইংল্যান্ডে যুক্তিসংগত কারণে শিশুদের মারধর আইনসম্মত হলেও, রয়্যাল কলেজ অব পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ (আরসিপিসিএইচ) বলছে, কারণ যতই যৌক্তিক হোক না কেন, শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পাওয়া যায়নি। বরং গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক শাস্তির কারণে শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব বাড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান আইন সংশোধনের লক্ষ্যে ‘চিলড্রেনস ওয়েলবিইং অ্যান্ড স্কুলস বিল’ উত্থাপন করেছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য জেস আসাতো।

নির্ধারিত সংখ্যক সংসদ সদস্য বিলটিতে সমর্থন দিলেই ইংল্যান্ডে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে শিশুদের গায়ে হাত তোলা। এমনকি শিশুকে শারীরিকভাবে আঘাত করার অধিকার বাবা-মায়েরও থাকবে না।

তবে বিলটি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ শিশুদের গায়ে হাত তোলা বন্ধের পক্ষে থাকলেও, অনেকেই মনে করেন, সন্তানকে শাসনের পূর্ণ অধিকার বাবা-মায়ের থাকা উচিত এবং সেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।

অনেকে মনে করেন, শিশুরা কখনো কখনো এমন আচরণ করে, যেখানে শারীরিক শাস্তি প্রয়োজন হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শাস্তি হিসেবে শিশুকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হলে সে আরও বেশি বিরোধী আচরণ করে।

আরসিপিসিএইচ (RCPCH)-এর কর্মকর্তা প্রফেসর অ্যান্ড্রু রোল্যান্ড বলেন, ‘ভিক্টোরিয়ান যুগের এসব শাস্তির ধরন বন্ধ করার সময় এসেছে।’

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শাসন হিসেবে মারধর শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না। বরং এটি তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ ও আগ্রাসন তৈরি করে।

ইংল্যান্ডে গত বছর বাবা ও সৎ মায়ের মারধরের শিকার হয়ে মারা যায় ১০ বছর বয়সী সারাহ। এরপর থেকেই শিশু সুরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন শিশুদের গায়ে হাত তোলা নিষিদ্ধ করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে যুক্তিসংগত কারণে শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া বৈধ থাকলেও, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে এটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিশ্বের ৬৭টি দেশে শিশুদের শারীরিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং আরও ২০টি দেশ এই সংস্কৃতি বন্ধের পরিকল্পনা করছে।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights