সংসদে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (সংশোধন) বিল, ২০২৩ পাস

অনলাইন ডেস্ক

প্রবাসে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের আইনি কাঠামোর আওতায় আনতে এবং অভিবাসন সেক্টরে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়নের লক্ষ্যে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ পাস করা হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ আজ জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন এবং ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়।

এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

বিলে ‘সাব-এজেন্ট বা প্রতিনিধি’ বিষয়ক সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সাব-এজেন্ট বা প্রতিনিধির অর্থ এই আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তি, যিনি কোনো রিক্রুটিং এজেন্টের সাব-এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য সংশ্লিষ্ট এজেন্টের চাহিদা অনুযায়ী অভিবাসী কর্মী সংগ্রহ করেন।
বিলে অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ব্যাংক ঋণ, কর রেয়াত, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি দেয়া ইত্যাদি প্রবর্তন ও সহজ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অভিবাসী কর্মী তথা নারী অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা ও সুরক্ষার বিধানের বিষয়টি নতুন আইনে সংযোজন করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়ার সকল স্তরে এবং বৈদেশিক কর্মস্থলে নারী অভিবাসী কর্মীদের সম্মান, মর্যাদা, অধিকার, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ আর্থিক ও অন্যান্য কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারবে।

বিলে তদন্ত ও শুনানী ব্যতিরেকে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় রিক্রুটিং লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিতকরণের বিধান করা হয়েছে।

অভিবাসী কর্মীর দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে বিলে বলা হয়েছে, প্রত্যেক অভিবাসী কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও বৈধ পন্থা অবলম্বন করবেন এবং বিদেশে অবস্থানকালে আইন বহির্ভূত কোন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

বিলে লাইসেন্স বাতিল বা প্রত্যাহারের পর রিক্রুটমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রমের দন্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন রিক্রটিং এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল বা প্রত্যাহার করা হলে ওই রিক্রুটিং এজেন্ট রিক্রুটমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করলে এটি হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অন্যূন ১ বৎসর ও অনধিক ২ বৎসর কারাদন্ড এবং অন্যূন ১ লাখ টাকা ও অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

কোন রিক্রুটিং এজেন্ট বিধি বহির্ভূতভাবে কোন শাখা অফিস পরিচালনা করিলে কিংবা কাউকে সাব-এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ করলে এটি হবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য উক্ত রিক্রুটিং এজেন্ট ১ বৎসর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১ লাখ টাকা এবং অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (সংশোধন) আইন, ২০২৩ -এ রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থার অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধ সংঘটনের দায়ে রিক্রুটিং এজেন্সিকে অন্যূন ৫০ হাজার টাকা এবং অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের প্রায় ১৭৪টি দেশে এক কোটির অধিক প্রবাসী কর্মী তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণ এবং সুষ্ঠু নিরাপদ, নিয়মিত ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

তিনি বলেন, অভিবাসন সেক্টরে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়নের লক্ষ্যে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। আইনটি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বাস্তব প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রণয়নের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আইনটির কতিপয় ধারা সংশোধন করেছে।

বিল পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় সদস্য ফখরুল ইমাম, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারি, বেগম রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights