সমুদ্রের নিচে কীভাবে ভূমিকম্প হয়?

অনলাইন ডেস্ক
বন্যা, সুনামি, মেঘভাঙা বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিকম্পের মতো মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বর্তমানে সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। একই মাসে পরপর তিনবার ভূমিকম্প হয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে। কোথাও খরা তো আবার কোথাও ভয়ঙ্কর বন্যার ভেসে যাচ্ছে সব কিছু। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে কখনও মনে এই প্রশ্ন এসেছে ভূমিকম্প হলে সমুদ্রের নিচে ঠিক কী হয়? তবে সমুদ্রের ভূমিকম্পই কি সুনামি নাম নেয়? সমুদ্রে কি আদৌ ভূমিকম্প হয়? ঠিক যখন গোটা বিশ্ব ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কিত, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎ একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। প্রচুর সংখ্যক মানুষের নজর গেল সেই ভিডিওতে। ডুবুরিরা সমুদ্রের নিচে ভূমিকম্পে কী পরিস্থিতি, তা লক্ষ্য করেছেন। ভূমিকম্প হলে সমুদ্রের নিচে ঠিক কী হয়, তা হয়তো সত্যিই ধারণার বাইরে। ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওতে আপনি সেই দৃশ্য দেখতে পাবেন।

ভাইরাল ক্লিপটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়েছে (@vidopolis) নামের একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। ক্যাপশনে লেখা, “এই ডুবুরিরা সমুদ্রের নিচে ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছেন। এটা কতটা ভয়াবহ, একবার ভাবুন? এরা স্কুবা ডাইভিং করছিলেন এবং হঠাৎ সেখানে ভূমিকম্প হয়।”

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রচুর সংখ্যক মানুষ। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ভিডিওটি মালুকু দ্বীপপুঞ্জে (ইন্দোনেশিয়া) অবস্থিত বান্দা সাগরের।
সমুদ্রে কি আদৌ ভূমিকম্প হয়?

ভূমিকম্পের প্রধান কারণগুলো হল টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ, মানব ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও ভূতাত্ত্বিক কারণ, প্রাকৃতিক ঘটনা এবং মানুষের কার্যকলাপের কারণে ভূমিকম্প হতে পারে। এবার ভূতত্ত্ববিদদের হিসেব বলছে, মহাসাগরে বা সমুদ্রে ভূমিকম্প সাধারণত ২০০ থেকে ১,০০০ বছরের মধ্যে ঘটে। সমুদ্রের নিচে থাকা প্লেটের বিপরীতে ভাসমান প্লেটের চাপ বাড়ে। আর সেই কারণে নিচে থাকা প্লেটটি পিছনে ধাক্কা দিতে শুরু করে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে সব কম্পনের সৃষ্টি হয়। সেই কম্পনের কারণেই হয় ভূমিকম্প।

সমুদ্রের ভূমিকম্পই কি আসলে সুনামি?

বিজ্ঞানীদের মতে, সুনামি হল একটি বৃহৎ ধ্বংসাত্মক সামুদ্রিক তরঙ্গ। আর এই তরঙ্গ সমুদ্রের তলদেশে উৎপন্ন হওয়া ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরি থেকেই হয়। সুনামি আর জলোচ্ছ্বাস কিন্তু আবার এক নয়। জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় বায়ুপ্রবাহের জেরে বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। আর সুনামি হয় সমুদ্রের তলদেশে হওয়া ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির কারণে। সুনামি একপ্রকার শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ভূকম্পবিদদের মতে, পৃথিবীর মোট সুনামির প্রায় ৭০% প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলে, ৯% ক্যারিবিয়ান সাগরে হয়। আর ১৫% ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে এবং ৬% ভারত মহাসাগরে হয়ে থাকে। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় বলয়কে কেন্দ্র করে অবস্থিত আলাস্কা, জাপান, ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বেশিমাত্রায় সুনামি দেখা যায়। সুনামি তরঙ্গ ৩০ ফুট পর্যন্ত উচ্চ হতে পারে এবং ৫০০ এমপিএইচ পর্যন্ত গতিতে এগোতে পারে। সুনামির তরঙ্গ ১২০ মাইল পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। সূত্র: নোয়া, সায়েন্টিফিক আমেরিকা, স্কুল অব ওসানোগ্রাফি, প্রিভেনশন ওয়েব, লাইভ সায়েন্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights