সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত নিপাহ ভাইরাসে
নিজস্ব প্রতিবেদক
খেজুরের রস ডেকে আনছে বিপদ। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। শীতকালে রস উৎসব, অনলাইনে রস বিক্রির ফলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এ রোগ। তাই খেজুরের রস পান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ও চিকিৎসকরা।
গতকাল নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ে অবহিতকরণ সভার আয়োজন করেছিল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বাদুড়ের মূত্র বা লালার মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়।
বাদুড় যখন খেজুরের রস খায়, তখন তার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়। মানুষ সেই রস কাঁচা খেলে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তারপর আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্য ও পরিচিতরা আক্রান্ত হয়। তাদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি পরামর্শ দেন, ‘কাঁচা খেজুরের রস ও অর্ধেক খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। অনলাইনে নিরাপদ, ফুটানো এরকম নানা ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে খেজুরের রস। এতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নিপাহ আক্রান্ত রোগী।
জনস্বাস্থ্যবিদ আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। এ ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো অবস্থাতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না। তবে খেজুরের রস গুড় বানিয়ে খাওয়া যাবে। খেজুরের রস ছাড়াও বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। আমরা যেসব ফল বা সবজি না ছিলে খাই, যেমন- টমেটো, বরই, পেয়ারা, স্ট্রবেরি সেগুলো অবশ্যই সাবান দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। আর যেসব ফল ছিলে খাই, সেগুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। বাদুড় খেয়েছে এমন কোনো ফল খাওয়া যাবে না।
আইইডিসিআর-এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শারমিন সুলতানা বলেন, ২০০১ সালে মেহেরপুরে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ভাইরাসজনিত এ রোগ দেশের মোট ৩৪টি জেলায় ছড়িয়েছে। রোগটিতে এখন পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন আক্রান্ত এবং মারা গেছেন ২৪০ জন। অর্থাৎ আক্রান্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার শতকরা ৭১ শতাংশ। মৃত্যুহার বিবেচনায় যা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণ ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক শাহদাত হোসেন বলেন, যেহেতু এ রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, তাই মানুষের কাছে এর তথ্যগুলো পৌঁছে দিতে হবে। অনুষ্ঠানে নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই দ্রুত শনাক্ত হলেই বেঁচে যাবেন তা বলা কঠিন। আর যারা বেঁচে যান তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না, পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। রস উৎসব করে নিপাহ ভাইরাসকে দাওয়াত দেওয়া উচিত নয়। তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, খিঁচুনি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।