সাপের মুখে চুমু খেলেও সে ছোবল মারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্যে সভা করার অনুমতি দেওয়া কিসের আলামত? প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, যে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন সেই জামায়াতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্যে সভা করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ এবং এ জন্য বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্যও করেছে। এটা কিসের আলামত আমরা জানি না। মেনন গতকাল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তার বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মেনন তার বক্তৃতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালো হাত ছিল বলে মন্তব্য করেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, যে কথাটা আমি সব সময় বলি, এখনো বলছি সাপের মুখে চুমু খেলেও সাপ ছোবলই মারে। জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে। তিনি বলেন, স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে এ কথা বলেছে। এর জন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নাই। জামায়াত কিন্তু তার অবস্থান থেকে একচুলও সরে নাই। ওই সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা জোক করে বলেছিলেন, বিএনপি-জামায়াত একই বৃন্তের দুটি ফুল।
মেনন বলেন, ওই একই কথা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নাই। বেশ কিছু সময় আগে বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল, দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জে’র কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। আর তার জন্য শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এটা তাদের পুরনো নীতির ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্য সমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি বলেন, বাইডেন সাহেব ট্রাম্পকে সামলান। আমাদের ঘর আমরা সামলাব। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে। বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তারেক রহমান নির্বাচন না করে ২০২৯-এর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এর মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তার সেই স্বপ্নও পূরণ হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে। উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক নেতা মেনন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতার কারণে জিনিসপত্রের মূল্য একেবারেই লাগাম ছাড়া। পিঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপেই বোঝা যায় যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা আগ্রহী নন অথবা কাউকে সুবিধা দিতে চান। ১০ দিন ধরে পিঁয়াজের মূল্য বাড়তে দিয়ে সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ছেড়ে রেখে যখন পিঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত হলো তত দিনে ভোক্তা-সাধারণ মানুষ কেবল নয়, কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।