সৈকতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখলেন পর্যটকরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি
বর্ষ বিদায় ও নববর্ষকে ঘিরে প্রতিবছর কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক ভ্রমণে আসলেও গত ৫ বছর ধরে আশানুরূপ পর্যটক আসেননি। ২০২৩ সালকে বিদায় দিয়ে ২০২৪ সালকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে নেই কোন আয়োজনও। তবে যে পর্যটকরা এসেছেন তাদের সাথে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সামিল হয়ে স্থানীয়রাও দেখেছেন বিদায়ী বছরের শেষ সূর্যাস্ত।
৩১ ডিসেম্বর পশ্চিম আকাশে বিকেল ৫ টা ১৯ মিনিটে কালের গর্ভে ডুব দেয় বছরের শেষ সূর্য। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়ে আরো একটি বছর। সেই সূর্যাস্ত অবলোকনের মধ্য দিয়ে আগামীর দিনগুলো মসৃণ হোক এমনটাই প্রত্যাশা সূর্যাস্ত দেখতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের। আর রাত পোহালেই শীতের হিমেল হাওয়া ও শিশির ভেজা বালিয়াড়িতে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখবেন পর্যটকরা।
৩১ ডিসেম্বর বিকেল থেকে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে সাগর পাড়ে। সৈকতে দাঁড়িয়ে একটি বছরকে বিদায় জানানো পর্যটকের কাছে স্মৃতিময়। সমুদ্রের বিশালতায় পুরনো সব গ্লানি মুছে নতুনকে গ্রহণের শপথ নিচ্ছেন অনেকে।
ঢাকা থেকে সপরিবারে আসা শাহজাহান তালুকদার বলেন, অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করেছিলাম এ বছরের শেষ দিনটা কক্সবাজার এসে পরিবারের সঙ্গে কাটাবো। অবশেষে তাই হলো। বালুচরে দাঁড়িয়ে সবাই বছরের শেষ সূর্যটাকে বিদায় জানাচ্ছি।
রাজশাহীর বেসরকারি কলেজের শিক্ষক মিরাজুন নুর চৌধুরী বলেন, ‘সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্য কক্সবাজার একটি সেরা জায়গা। তাই বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কয়েকদিন আগে কক্সবাজারে এসেছি। বছরের শেষ দিনটি স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে আমরা অনেক মজা করছি এখানে।’
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী শফিউল আলম সবুজ বলেন, ‘কক্সবাজার আমার জন্মস্থান। অবসর সময়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সমুদ্রপাড়ে চলে আসি। আজ বছরের শেষ দিনটিও সমুদ্রপাড়ে এসে কাটালাম। খুবই ভালো লাগছে।’
সায়েম আহমেদ নামের ঢাকার সাভার থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, যে আশা নিয়ে এসেছিলাম কক্সবাজারে সে আশা পূরণ হয়নি। আনন্দ-ফূর্তি করব থার্টি ফার্স্ট নাইটে এসব আসলে এখানে হচ্ছে না। শুধু সমুদ্র সৈকত দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
আরেক পর্যটক মারজান চৌধুরী বলেন, আমি অনেক দেশে ঘুরেছি। বিভিন্ন দেশের থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন দেখেছি। এখানেও এরকম হওয়া উচিত। নাহয় দেশীয় পর্যটকরাও বিদেশে চলে যাবে।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, ‘এবার কক্সবাজারে থার্টি ফাস্ট নাইটের কোনো আয়োজন না থাকলেও অনেক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে। তবে আশানুরূপ পর্যটক আসেননি। তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। তাই অধিকাংশ হোটেল কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কক্সবাজারে উন্মুক্তভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সমুদ্র সৈকত কিংবা পর্যটন স্পটের কোথাও আতশবাজি ও পটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ড সংগীতের আয়োজন করা নিষেধ। পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজারে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো উন্মুক্ত আয়োজন না থাকলেও পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ভ্রমণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এজন্য পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।’