সৌদিতে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ থেকে গত অক্টোবরে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন প্রায় ১.০৪ লাখ মানুষ। এর মধ্যে অক্টোবরে ৮৩ হাজার ৫৮২ জন বাংলাদেশি কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছে সৌদি আরব। এটি গত ৩৪ মাসের মধ্যে কোনো একটি দেশে সর্বোচ্চ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ।

শ্রম, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত মাসে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন প্রায় ১.০৪ লাখ বাংলাদেশি।

এই বছরের জুন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থান কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে সৌদিতে কর্মসংস্থান পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ২৪৯ জন বাংলাদেশি। যদিও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রায় দেড় মাস ভিসা ইস্যু বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজ-উল-ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে অনেক বড় প্রকল্প শুরু হয়েছে। তাই দেশটিতে শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে এবং এর সুবিধা নিয়ে ভিসা ট্রেডিং চলছে।

তিনি বলেন, ভিসা ট্রেডিংয়ের জন্য প্রায়ই ভুয়া চাহিদাপত্র ইস্যু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত লোক পাঠানো হচ্ছে এবং সবাই কাজ পাচ্ছে না।

রিয়েল এস্টেট সেবা কোম্পানি জেএলএলের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী নির্মাণ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছে সৌদি আরব। এর মধ্যে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

জেএলএলের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের মোট নির্মাণ প্রকল্পের ৩৯ শতাংশ সৌদি আরবের হাতে রয়েছে। আরব নিউজে এই বছর জুন মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রকল্পের মোট মূল্য ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

সৌদি আরবে নির্মাণ খাতে মোট প্রকল্পের ৬২ শতাংশ বা ৯৫০ বিলিয়ন ডলার নির্মাণ সম্পদ খাতে এবং ৩৮ শতাংশ বা ৫৮২ বিলিয়ন ডলার পরিবহণ, অবকাঠামো এবং অন্যান্য সেবা খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এমইইডি প্রোজেক্টস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এমনটাই জানিয়েছে জেএলএল।

সৌদি আরব বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় গন্তব্য। দেশটিতে কাজ করছেন প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি। তারা মূলত নির্মাণ এবং পরিষেবা খাত যেমন, পরিচ্ছন্নতা এবং গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বলে বিএমইটির তথ্য থেকে জানা গেছে।

তবে, সৌদি আরবে ভিসা ট্রেডিং এবং উচ্চ ইকামা ফি বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ কর্মীদের মধ্যে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসার প্রবণতা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, যথেষ্ট কাজ থাকলেও, ইকামা ফি বাড়ানোর কারণে শ্রম বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইকামা ফি কমানোর মাধ্যমে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ জন অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে আসছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ শ্রমিক মূলত ওয়ার্ক পারমিটের খরচ বাড়ানোর কারণে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসছেন। ইকামা ফি এখন বছরে ১১ হাজার সৌদি রিয়াল। এটি অনেক শ্রমিকের বার্ষিক আয় থেকেও বেশি।

তিনি জানান, নিয়োগকর্তারা এত বেশি টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে একসঙ্গে ১০০ বা এক হাজার শ্রমিকের জন্য। গত দেড় বছর ধরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশিসহ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক বৈধ ইকামা ছাড়াই কাজ করছেন।

সৌদি কর্তৃপক্ষ যাতে ইকামা ফি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে, তা জন্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আন্তর্জাতিক প্রভাব ব্যবহার করার অনুরোধ করেছেন নোমান।

সৌদি আরবের পরে কাতার ছয় হাজার ৫০৭ বাংলাদেশি শ্রমিককে নিয়োগ করেছে। এরপর রয়েছে সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও জর্ডান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ অক্টোবর মাসে ২.৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি গত বছরের ১.৯৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২১.৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার।

ডলার মূল্য কিছুটা কমলেও, রেমিট্যান্স প্রবাহে তা খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকারের প্রতি রেমিট্যান্স প্রেরকদের আস্থা এবং দেশের বাইরে মূলধনের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights