স্পা সেন্টারে অসামাজিক কর্মকাণ্ড, ডিএনসিসির মামলা

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর গুলশানে একটি স্পা সেন্টারে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে মামলা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির পি-প্রসিকিউশন অফিসার আব্দুস সালামের দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয়েছে স্পা সেন্টারের মালিক হাসানুজ্জামান (৪২), তার স্ত্রী ও স্পা সেন্টারের ম্যানেজার শাহিনুর আক্তার পায়েল (৩৫) ও বাড়ির মালিক এ.টি এম মাহবুবুল আলমকে।

বুধবার গুলশান দুইয়ের ৪৭ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়িতে স্থাপিত স্পা সেন্টারটিতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের সময় বাড়ির চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। পরে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি বয়সী তরুণীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আনা হতো। স্পা’র নামে তাদের দিয়ে করানো হতো ‘পতিতাবৃত্তি’। পরে রাতেই গুলশান থানায় মামলা করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, এদিন দুপুর তিনটায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছিল। অভিযানে ৪৭ নম্বর সড়কে বিভিন্ন আবাসিক ভবন হিসাবে নিবন্ধিত হওয়ার পরও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠান সমূহের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করা হয়। এর অংশ হিসেবে গুলশান ২৫ নম্বর বাড়ির চারতলায় গেলে সেখানকার ৪-ডি নম্বর ফ্ল্যাটটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমাদুল হাসানের নেতৃত্বে ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশ করে উপস্থিত ব্যক্তিদের অসংলগ্ন অবস্থায় দেখা যায়।
পরে ফ্ল্যাটের ভেতরে থাকা ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানা যায়, পলাতক হাসানুজ্জামান, পায়েল ও বাড়ির মালিক এ.টি এম মাহবুবুল আলম নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে ‘অল দ্যা বেস্ট স্পা’ সেন্টার পরিচালনা করছেন। আবাসিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স দিলেও ভবনটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহৃত হচ্ছিল। এতে ডিএনসিসি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করায় তা আইনত অবৈধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

যাদের ৪-ডি নম্বর ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে, তারা স্পার আড়ালে পতিতাবৃত্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এর নেপথ্যে মামলার আসামিদের নাম বলেছেন তারা। এজাহারে ডিএনসিসির পি-প্রসিকিউশন অফিসার আব্দুস সালাম আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়ে সংগ্রহ করে তাদের বিভিন্ন কাজের সুযোগ দেওয়ার কথা বলে ওই স্পা সেন্টারে আনা হতো। এরপর খরিদদার সংগ্রহ করে অর্থের বিনিময়ে পতিতাবৃত্তি ও অসামাজিক কাজ করানো হতো।

আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে অনৈতিকভাবে লাভবান হতে ফ্ল্যাটটিতে পতিতালয় পরিচালনা করে আসছিল। নারীদের সেখানে এনে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে অপরাধ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযান চলার সময় বিকেল ৩টার দিকে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন জানায় ২৫ নম্বর বাড়ির নিচতলায় দুজন তরুণী পড়ে আছেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে জানানো হয়। সদস্যরা এসে ওই দুজনকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়। দুই তরুণীর মধ্যে একজন মারা গেছেন। অপরজন এখনো চিকিৎসাধীন।

এদিকে, অল দ্যা বেস্ট স্পা সেন্টার থেকে আটক নয়জনকে ৫০০ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অনাদায়ে তাদের পাঁচদিনের দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। তবে তারা জরিমানার টাকা পরিশোধ করে সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্ত হয়েছেন।

সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ শহীদুল আলম জানান, ডিএমপি অধ্যাদেশের ৭৪ ধারায় অপরাধ করায় তাদের একই অধ্যাদেশের ১০০ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ।

গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসিব বলেন, মামলার আসামিরা এই ঘটনার পর থেকে পলাতক। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পতিতালয় চালানোর অভিযোগে যে মামলা করা হয়েছে, তাতে আর কেউ জড়িত কিনা, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এক তরুণীর নিহতের ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights