১৯ তম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস- এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

জহিরুল ইসলাম হিরন, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
বিশ্বের বৃহত্তম হালাল শোকেস হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেস এর ১৯তম আসরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে।

খাদ্য ও পানীয়, মডেস্ট ফ্যাশন, ই-কর্মাস, ইসলামিক ফিন্যান্স ও ফিনটেকসহ মোট ১৩টি ক্লাস্টারে বিশ্বের ৪০টি দেশের ১০৪০টি প্রতিষ্ঠান ১৮০০টি বুথের মাধ্যমে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ৯টি বুথে মোট ১৬টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আয়েজিত মেলাসমূহের মধ্যে এটিতেই বাংলাদেশ বড় পরিসরে অংশগ্রহণ করছে।

মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়, ব্যবসা এবং শিল্প এবং মালয়েশিয় বহির্ব্যবসা উন্নয়ন কর্পোরেশন এর আয়োজনে Malaysia International Trade & Exhibition Centre এ এই মেলা চলবে ১২-১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। উল্লেখ্য যে, এই মেলাতে মালয়েশিয়ার Halal Development Corporation Berhad (HDC) এবং Department of Islamic Development of Malaysia (JAKIM) সহযোগি সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সরোয়ার বুধবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে মালয়েশিয়ায় তাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। এ সময় হাইকমিশনার উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, হালাল পণ্যের বাণিজ্য একটি ক্রমবর্ধমান সেক্টর। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও হালাল পণ্য বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে হালাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, সারা বিশ্বে বর্তমানে হালাল বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, ২০৩০ সালে বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়াবে ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ যদি এর ১০ শতাংশ বাজার ধরতে পারে তাহলে ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে, ১ শতাংশ ধরলেও ৩৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

এ সময় Malaysia External Trade Development Corporation (MATRADE) এর পরিচালক এস জয়শংকর, আয়োজককারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের দূতালয় প্রধান ও কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) ফারহানা আহমেদ চৈাধুরী, কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য, কাউন্সিলর (কনস্যুলার) রাসেল রানা, প্রথম সচিব (প্রেস) সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ, প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ, প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রেহানা পারভীনসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী আনোয়ার ইব্রাহীম এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশের প্রদর্শিত পণ্যসমূহকে সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করেন।

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ১৯তম Malaysia International Halal Showcase এবং The Global Halal Summit (GhaS) 2023 উদ্বোধন করেন। এ সময় মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্য, পোশাক শিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, আইটি ও হস্তশিল্প এসকল ক্যাটগরিতে বাংলাদেশ থেকে বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোং লিমিটেড, এগ্রোভার্স লিমিটেড, তাহমিনাস, পিপলস লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ, কেএমআর ক্রাফট, কারুপণ্য, বন্ধন নূরস, অ্যালবাট্রস ফ্যাশন, পশরা লেদার এন্ড জুট, জুটএক্স, বিদোরা ব্যাগ এবং হস্তশিল্প, টেকসলিউশন, প্রিঙ্ক, ত্রিনাস ক্লোসেট, ডাইনাস গ্ল্যামার এবং কল্পতরু এসকল প্রতিষ্ঠানসমূহ মেলায় অংশগ্রহণ করছে।

১৯তম MIHAS স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে হালাল অর্থনীতির জন্য স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উদ্ভাবন এবং টেকসই উদ্যোগের ওপর বিশেষ জোর দেবে। এই মেলা শুধূমাত্র ASEAN অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এখানে আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ট্রেড কমিশন, সরকারি সংস্থা, শিল্প ও ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ থাকবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় হালাল বাণিজ্যের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হালাল বাণিজ্যে মালয়েশিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য এবং সে কারণে এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সাথে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে হালাল সেক্টরের উন্নয়ন তথা মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights